রুকস্যাক
ভ্রমণ : দোবানের দরবারে।

দেবস্মিতা ঘোষ : চলুন আজ যাওয়া যাক উত্তরবঙ্গের বুকে, উজ্জ্বল সবুজ-হলুদ রঙে রঙিন ছবির মতো সাজানো এক উপত্যকায়। রঙপো এবং ঋষি নদীর সংযোগস্থলে অবস্থিত এই উপত্যকার নাম দোবান ভ্যালি যেখানে প্রকৃতির উদারতায় পাহাড়ি নদী এবং দিগন্তবিস্তৃত আকাশের এক অদ্ভুত মেলবন্ধনের সাক্ষী হওয়া যায়। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে প্রায় ৮৫ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে দোবান ভ্যালি পৌঁছাতে সময় লাগবে সাড়ে তিন-চার ঘন্টা। শিলিগুড়ি হয়ে আসলে শেয়ার কার ধরে রঙপো পৌঁছাতে পারলেই গাড়ি রিজার্ভ করে বা হোমস্টের গাড়ি করে নদীর উপর দিয়ে নদী পার হয়ে পৌছাতে পারবেন দোবান ভ্যালিতে।
রোরাথাং ব্রিজ ধরে পায়ে হেঁটে ও নদী পার হওয়া যায়। শহরের কোলাহল থেকে সহস্র যোজন দূরে প্রকৃতির সাথে নিরালায় অবসর যাপনের এই অভিজ্ঞতা সবটুকু প্রশান্তি দিয়ে জুড়িয়ে দেবে আপনাকে। উপত্যকা থেকে ১৮ কিমি দূরে আরিটারের লামপোখরি লেক ঘুরে আসতে পারেন। পাহাড়ি জংলী পথে ট্রেক করে আরিটার টপে হাজির হতে পারলে কাঞ্চনজঙ্ঘার অসাধারণ প্যানরমিক ভিউ পাওয়া যাবে মানখিন ভিউপয়েন্ট থেকে।
এছাড়াও আরিটার ডাকবাংলো এই ভ্রমণের অপর একটি অন্যতম আকর্ষণ। দোবান ভ্যালিতে পর্যটন এখনো সঠিকভাবে পৌঁছতে পারেনি বলে এখানে রাত্রিবাসের একমাত্র ঠিকানা কানন ভ্যালি হোমস্টে। খরচ সাধ্যের মধ্যে। হোমস্টের বারান্দা থেকে চারিদিকে ৮ একর জমিতে মাথার উপর আকাশ আর পায়ের নিচের জমি প্রকৃতির হাতে হাত রেখে অপরের সুহৃদ রূপে বিরাজমান।

আর যে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, আপনি যদি পক্ষীপ্রেমী হন তাহলে শীতকালে অগণিত পরিযায়ী পাখিদের সমাগম আপনাকে সমৃদ্ধ করবে। সবুজের গালচেতে রোদের রঙ মেখে মেখে লাল, নীল, হলুদ পাখিদের দল কুহুতানে সঙ্গত করবে নদীর অবিরত কল কল শব্দের বহমানতাকে। এই অনবদ্য যুগলবন্দির সাক্ষী থাকতে অবশ্যই আগামী শীতে পৌঁছে যান দোবান ভ্যালিতে। বার্ড ওয়াচিং’ ছাড়াও, নদীতে স্নান করা, মাছ ধরা,রাতের আকাশে Startrail দেখা, রাতের অন্ধকারে campfire করে দিন-তিনেক অবসর কাটানোর দারুণ সুযোগ রয়েছে দোবান ভ্যালিতে।
রুকস্যাক
ভ্রমণ : বাগুরানের বেলাভূমিতে।

দেবস্মিতা ঘোষ : বাতাসে শীতের আমেজ, সোনালী রোদের অকৃত্রিম স্নেহে আগলে নেওয়া স্বভাব, সুনীল আকাশ সবে মিলে প্রকৃতি যেন কোল পেতে বসে দুবাহু বাড়িয়ে অপেক্ষা করছে। আর আপনিও বুঝি নাগরিক ঘোড়দৌড়ে বিধ্বস্ত ????
বেশি নয়, ব্যস্ততার চোখরাঙানি থেকে এক কি দুই দিনের ছুটি বন্দোবস্ত করতে পারলেই মিলবে মুক্তির আস্বাদ। দিগন্তজোড়া নীলের মেলবন্ধন, চোখের পাতায় নেমে আসা বালির চড়, গর্জনরত সমুদ্রের ঢেউ এর মাঝে একান্তে অবসার কাটাতে পৌঁছে যান পূর্ব মেদিনীপুরের বগুড়ান জলপাই এর সমুদ্র তটে।
কলকাতার ধর্মতলা থেকে বাস ধরে বা হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেন এ কাঁথি পৌঁছে যান। কাঁথি থেকে টোটোতে ২৫০-৩০০ টাকার বিনিময়ে প্রায়ে ২৪ কিমি পথ অতিক্রম করে ঘন্টাখানেকের মধ্যেই পৌঁছে যান বগুড়ান জলপাই এর সমুদ্রতীরে। সমুদ্র এখানে শান্ত।
আর একটি অভিনব বিষয় হল জোয়ারের সময় সমুদ্র তীরের অনেক কাছে চলে আসে আবার ভাটার সময় অনেক দূরে চলে যায়। সারা তত জুড়ে দেখতে পাওয়া যায় লাল কাঁকড়ার অবাধে ছুটোছুটি করে লুকোচুরি খেলা। সমুদ্রে সূর্যোদয় সাক্ষী থাকা এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। তাই হাতে ছুটি একদিন বেশি থাকলে একদিন থেকে যাওয়ায় ভালো।
দিঘা, মান্ডারমনি বা জুনপুটের মতো পর্যটন এর ঘেরাটোপ বগুরান কে গ্রাস করেনি এখনো। তাই অফবিট এ নিরিবিলি ছুটি কাটানোর সেরা ঠিকানা হল বগুরান। জুনুপুট সমুদ্রতীর, দরিয়াপুর, কপালকুণ্ডলা মন্দির কাছাকাছির মধ্যেই ঘুরে দেখে নেয়া যায়। এখান থেকে আপনি আশে পাশের সমুদ্রসৈকত গুলিও ঘুরে আসতে পারেন যেমন বাঁকিপুট, দিঘা, মান্ডারমনি, তাজপুর।
তবে এখানে রাত্রিবাসের একমাত্র ঠিকানা হলো হোটেল সাগর নিরালা। কারণ খুব বেশিদিন হয়নি বগুরান বাংলার ভ্রমণ মানচিত্রে স্থান করে নিয়েছে। শহুরে জীবন যেসমস্ত সুবিধায় অভ্যস্ত সেই সব রকম সুবিধা এবং তিনবেলার আহার নিয়ে রাত্রিবাসের খরচ মোটামুটি কমবেশি ১০০০ টাকা।
এই শীতে তবে উইকেন্ডে প্ল্যান করেই ফেলুন বগুরান জলপাই সমুদ্রসৈকত ভ্রমণ। রোদ্দুরে পিঠ পেতে বসে বালিতে আঙ্গুল দিয়ে বিলি কেটে কেটে, কিংবা লাল কাঁকড়ার দল কে গর্ত অবধি ধাওয়া করে, কিংবা আবার ভোরের আধো আলোয় প্রিয়জনের সাথে ঝিনুক কুড়িয়ে দারুন কাটবে ছুটির দিনগুলো।