Connect with us

রিভিউ

রাতের নিস্তব্ধতায় লুকিয়ে আছে কোন সত্য? মুভি রিভিউ: রাত অকেলি হে

Published

on

সৌমেন্দু বাগ : শুনশান হাইওয়ে। অন্ধকার চিরে বেরিয়ে যাচ্ছে একটা আম্বাস্যাডর। একটা ছোট চেকপোস্ট পেরোতেই একটা লড়ি পিছু নিলো সেই গাড়িটার আর কিছুক্ষণের মধ্যেই দুর্ঘটনা এবং গাড়ির দুই যাত্রীকে খুন। নেটফ্লিকসে গত শুক্রবার মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘রাত অকেলি হে’ এর ওপেনিং সিকোয়েন্স এরকমই। গোটা 5 মিনিটের দৃশ্যে কোনো ডায়ালগ নেই, শুধুমাত্র সিনেমাটোগ্রাফি, ফলি, আর দৃশ্যের ইন্টেন্সিটি দিয়ে গোটাছবির পরিবেশটা তৈরি করে দিলেন পরিচালক।

ছবির মূল কাহিনী শুরু হয় পাঁচ বছর পর কানপুরে এক প্রাসাদে নিজের বিয়ের রাতেই এক বৃদ্ধ অভিজাতের খুন দিয়ে। আর সেই খুনের তদন্তে এসে পুলিশ অফিসার জটিল যাদব (নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী) আবিষ্কার করেন কলঙ্ক-পুরুষতান্ত্রিকতা-মিথ্যে লুকোনোর প্রবণতা এর অতল অন্ধকারে সত্য হারিয়ে যায় আর মিথ্যে যে বড়ো নিষ্ঠুর। তার করাল আক্রমণ থেকে কেও বাঁচতে পারে না! “What costs lie?” এই ছবি একটি এক্সপেরিমেন্টাল থ্রিলার। শুধুমাত্র ‘হুডানিট’ এ সীমাবদ্ধ না থেকে ছবিটি ‘হাওডানিট’ থেকে ‘হোয়াইডানিট’ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। ছবির নামে উল্লিখিত ‘রাত’ মানে কেবল সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয় এর মধ্যবর্তী সময় নয়, এই রাত মানে প্রত্যেক মানুষের মনের অন্ধকার কোন যে কোন আমরা সবাই ঢেকে রাখতে চায় দিনের ফটফটে সাদা আলোর মত সাজানো সত্যি দিয়ে আর এই অন্ধকার সময় টুকুতে আমরা কিন্তু সবাই একা। শুধুমাত্র সত্যি টুকুই আমাদের সম্বল।

পরিচালক হানি ট্রেহানের প্রথম কাজ। ভদ্রলোকের নাম ইতিমধ্যে বিশাল ভরদ্বাজ, অভিষেক চৌবে এর ছবিগুলোর সাথে যুক্ত ছিলো।ফলে বোঝায় যাচ্ছে ছবি নির্মাণের শিক্ষায় কোনো ত্রুটি ছিল না। তার প্রথমছবিতেও সেই শিক্ষার ছোঁয়া স্পষ্ট। ডার্ক থিম, চরিত্রের জটিলতা, সাসপেন্স, সুপ্ত হিউমর এসব তো ছবিতে ছিলই, এই ছবির বাড়তি পাওনা রহস্যের সাথে মেশানো একটি সামাজিক চিত্র।

সিনেমায় একটা সংলাপ বারবার উঠে এসেছে, “বাহার কি দুনিয়া বহত খারাপ হে।” যা সর্বৈব সত্য। কিন্তু ভিতরের দুনিয়া কতটা সুরক্ষিত সে প্রশ্ন থেকেই যায়।

ছবিটি দেখতে দেখতে খুব পরিচিত একজনের কথা মনে পড়বে। ব্যোমকেশ বকশী। ব্যোমকেশের কাহিনীর মতোই তদন্তকারী জটিল বাবু অনুমান ক্ষমতার উপর জোর দিয়েছেন, প্রত্যেক চরিত্রের মানসিকতা বোঝার চেস্টাকরেছেন এবং সবথেকে বড় কথা, কোনোকিছুর পরোয়া না করে ‘সত্য’ অন্বেষণ চালিয়ে গেছেন। এবং আরো কিছু বিশেষ ধরনের সাদৃশ্য আছে যা ছবি দেখলে ধরতে পারবেন।

ছবিটি টেকনিক্যালি খুব ওয়েল মেড ফিল্ম বলা যায়। সংক্ষিপ্ত সংলাপ, খুব ভালো ক্যামেরা ওয়ার্ক( প্রাসাদের চাকচিকক্যের সাথে চরিত্রদের অন্ধকার দিকের বৈপরীত্য ক্যামেরায় ফুটিয়ে তুলেছেন) , খুবসূক্ষ্ম বিজিএম আর গানের ব্যবহার এবং সর্বোপরি অভিনয়। ছবির একটাই দুর্বল দিক চিত্রনাট্য। থ্রিলার ছবির দৈর্ঘ্য দু ঘণ্টার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে, কিন্ত এই ছবি আড়াই ঘন্টার। গল্পের বিস্তৃতি অনেকটা আর প্রত্যেক চরিত্রের মানসিকতা কে ধরার চেষ্টার জন্য ছবিটি একটি দীর্ঘায়িত হয়েছে। কিন্তু সেই খারাপ লাগা টা মিটিয়ে দিয়েছে দুর্দান্ত অভিনয়।

নওয়াজউদ্দিন এর অভিনয় নিয়ে আর বলার কিছু নেই। তাঁর এতদিনের চরিত্র গুলোর থেকে যথেষ্ট সহজ একটি চরিত্র। কিন্তু রাধিকা আপ্তে, শ্বেতা ত্রিপাঠি, পদ্মাবতী রাও, নিশান্ত দাহিয়া, শিবানী রঘুবংশী এমনকি ছোট্ট একটা রোলে রিয়া শুক্লা ও অবধি দুর্দান্ত অভিনয় উপহার দিয়েছেন। স্বনান্দ কিরকিরে এবং তিগমাংশু ধূলিয়ার ও গুরুত্বপূর্ণ দুটি চরিত্র রয়েছে। আরেকজনের কথা বলা উচিত: আদিত্য শ্রীবাস্তব। আর রাধিকা আপ্তে -নেটফলিক্সের প্রেম-কাহিনীর আরেকটি পর্ব বলা চলে ছবিটিকে। পরিচালকের ব্রিলিয়ান্স এখানেই। ছবিটি দীর্ঘ হলেও একবারের জন্য ইন্টেন্সিটি কে একবারও কমতে দেননি। রহস্যের বিস্তৃতির জন্য এবং চরিত্রদের মনস্তত্বের জটিলতার জন্য আপনি শেষ অবধি বসে থাকবেন। টানটান থ্রিলার দেখতে অভ্যস্ত মানুষের মাঝের অংশে একটু বিরক্তি লাগতেই পারে।

গল্পের জন্য স্মিতা সিং(যিনি সেক্রেড গেমস এর সহলেখিকা), গল্পের প্রত্যেক মুহূর্তকে জীবন্ত করে তুলেছে পঙ্কজ কুমারের সুদক্ষ ক্যামেরা আর এ. শ্রীকর প্রসাদ এর সম্পাদনা কিছু জায়গা বাদে প্রায় নিখুঁত।

কিছুদিন আগে ‘বুলবুল’ এ অতিপ্রাকৃতিক ঘটনার মাধ্যমে আর এবার ‘রাত অকেলি হে’ এর মাধ্যমে সমাজের এক বিশেষ অংশ ও তাদের সংস্কৃতির প্রতি এক শক্তিশালী সংবাদ দেয়া হলো। সেইসঙ্গে ভারতীয় সিনেমায়নতুন কিছু ঘরানাও প্রকাশ করা হলো।

রিভিউ

মন্ত্রমুগ্ধ সঙ্গীতের এই বান্দিশ। ওয়েব সিরিজ রিভিউ : বান্ডিশ বান্ডিত্স

Published

on

বিপাশা দাস : পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠতম জীব হলো গিয়ে মানব। শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী হওয়ার সাথে সাথে বিভিন্ন প্রকার গুণের ও অংশীদার তারা। সঙ্গীত যার মধ্যে একটি, লক্ষ্য করে দেখবেন নিত্যদিনের প্রত্যেকটি কর্মের মধ্যে আপনি সুরের আশ্চর্য মেলবন্ধন খুঁজে পাবেন। এই আশ্চর্য মেলবন্ধন কে কাজে লাগিয়ে পরিচালক অঙ্কিত তিওয়ারি বান্ডিশ বান্ডিত্স নামক একটি ওয়েব সিরিজ আমাজন প্রাইম এরপর্দায় নিয়ে এলেন।

গুরুর প্রতি শিষ্যের অপার ভক্তি, সঙ্গীতের প্রতি অনবদ্য প্রেম একজন নিষ্ঠাবান শিষ্যের পরিচয়। পুরাকালের কাহিনী তো সবার কাছে জ্ঞাত, গুরুদেব দ্রোণাচার্য একলব্য এর আঙ্গুল গুরুদক্ষিণা হিবেসে চেয়ে গুরুভক্তির নিদর্শন স্বরূপ অক্ষত রাখেন। তেমনি এই ছবিতে রাধে তার টাকুরদা পণ্ডিত রাধেমোহনকে নিজের গুরুভক্তি এবং প্রেমের নিদর্শন কঠোর পরিশ্রমের সাথে দিয়েছে।

এবার যদি সঙ্গীতের ব্যাখ্যা চান তাহলে বলবো যথাযথ তার কোনো ব্যাখ্যা হয় না। ইতিহাসের দিকে নজর দিলে বুঝতে পারবেন সঙ্গীতের মহিমা কতটা ব্যাপ্ত। আকবরের নবরত্ন অলংকৃত তানসেন নিজের সঙ্গীতেরদ্বারা বৃষ্টি নামাতে পারতেন, ক্ষিপ্ত হাতিকে শান্ত করার ক্ষমতা ও তার গানের দ্বারা ফুটে ওঠে। তবে এই ওয়েব সিরিজের শেষে এমনটাই পরিচয় পেয়ে থাকবেন। ইন্ডিয়ান ক্লাসিক্যাল গানের সঙ্গেপপ মিউজিক এর অসাধারণ যুগলবন্দি সত্যিই তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো। সাথে রাজস্থানের সাংস্কৃতিক প্রতিপত্তি,রাজার উপস্থিতি সবকিছুই যেনো ইতিহাসকে চোখের সামনে ফুটিয়ে তুলতে যথেষ্ট। আমাদের ভারতবর্ষে ফোক গানের কদর এক আলাদা স্তরেই বিদ্যমান, এত সুন্দর ভাবে তার পরিবেশন সাথে বিভিন্ন অসাধারণ কিছু রাগের উপস্থিতি ভারতীয় ক্লাসিক্যাল সঙ্গীতের প্রেমে পড়ার জন্য যথেষ্ট।

অতুল কুলকর্ণী, নাসিরউদ্দিন সাহ, তৃধা চৌধুরী, শিবা চড্ডা দের মত নামকরা কিছু তারকাদের উপস্থিতি দেখা গেছে। সবার তাক লাগিয়ে দেওয়া অভিনয় এর পরিচয় আমরা আগেও পেয়েছি এই ওয়েব সিরিজেওবেশ সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন কিন্তু ঋত্বিক ভৌমিক (রাধে) এবং শ্রেয়া চৌধুরী (তামান্না) র অসাধারণ অভিনয় সত্যিই প্রশংসনীয়। লিড রোল রাধের পুরো ওয়েব সিরিজ টিকে এক আলাদা জায়গায় স্থান দিয়েছে সাথে তার বন্ধু কবীরের কিছু হাস্যকর মুহূর্তও এবং অটুট বন্ধুত্বের সাক্ষী এই সিরিজটি।

ডিরেকশনে র কথা বললে রাজেস্থানের যোধপুর নামক এই শহরটির সৌন্দর্য্য কে নব বধূর সাজের সাথে মিলিয়ে ফুটিয়ে তুলেছে যা এককথায় অতুলনীয়। কিন্তু কোথাও গিয়ে কিছু খামতি চোখে ধরা পড়েই। অন্তরঙ্গ মুহূর্তের প্রকাশ থাকলেও অত্যধিক পরিমাণে অকথ্য ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে যার ফলে পরিবারের সঙ্গে বসে দেখার কোনো সুযোগই নেই। সিরিজটির শেষের দিকে পপ এবং ভারতীয় ক্লাসিক্যাল সঙ্গীতের ছোয়া তো দূর নায়িকার উপস্থিতিই সরিয়ে দেওয়া হয়। লেখার ক্ষেত্রে এসব খামতি এড়িয়ে যাওয়া দায়।

শ্রীরাম গণপথী র চলচ্চিত্রশিল্প সত্যিই খুবই সুন্দর ভাবে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এডিটিং এ লিড রোল রাধে র মাস্কড ম্যান এর থিওরী এবং তার উপস্থাপনা কে দুর্বল ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সবশেষে মনমাতানো গানের যুগলবন্দী টি সত্যিই অবিস্মরণীয়। সেটা যদি নাই দেখলেন তাহলে কি দেখলেন প্রশ্ন করতে হয়। সঙ্গীত জগতের তিন অনবদ্য সৃষ্টিকর্তা কর্তা সংকর মহাদেভান, এহসান এবং লয়ের হাত ধরেই এই সিরিজের যে উত্থান। তাদের গাওয়া প্রত্যেকটি রাগের মধ্যে যে আলাদাই আবেগ, অনুভূতি,বেদনা,বিরহ,প্রেমের স্পর্ধা প্রকাশ পেয়েছে যা সত্যিই না শুনে বোঝা সাধ্যের বাইরে।

Continue Reading
Advertisement
Advertisement
Advertisement e

আমাদের ফেসবুকে পেজ লাইক করুন

Advertisement
Advertisement

জনপ্রিয় পোস্ট