ক্রীড়া প্রাঙ্গণ
বর্ডার গাওয়াস্কর ট্রফির দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ম্যাচের লাগাম রাহানে – জাদেজার হতে।

বিক্রম দাঁ : প্রথম ইনিংসে ১৯৫ রানে অজিদের অল আউট করে ব্যাট করতে নেমে ৩৬ রানে মায়ানক আগরওয়াল এর উইকেট হারিয়েছিল ভারত। দ্বিতীয় দিন এর শুরুতে কিছুটা ভাগ্যের সাহায্য পায় ভারত। অস্ট্রেলিয়ার কামিংস, স্টার্ক, হ্যাজেল উড নতুন বলে দুরন্ত বোলিং করে, আর তাতেই ভারতের তরুণ খেলোয়াড় শুভমন গিলের ব্যাটের কিনারায় লেগে চান্স তৈরি হয় কিন্তু অজিরা সেই ক্যাচ ধরতে ব্যর্থ হয়।
এরপরও কিন্তু তরুণ শুবমান এর ব্যাট থেমে থাকেনি, যতক্ষণ ক্রিজে ছিল ততক্ষণ স্কোর বোর্ড চলেছে ভারতের। এর পর কামিংসের বল এ ড্রাইভ মারতে গিয়ে আউট হতে হয় তাকে। পুজারাও আজ আর সেভাবে রান করতে পারেননি, গিলের কিছু পরেই সাজঘরে ফিরতে হয় তাকেও। তবে তারপর ম্যাচের লাগাম ধরেন ক্যাপ্টেন আজিনকে রাহানে।সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া সম্ভবত একেই বলে। আগের ম্যাচেই দল অলআউট হয়েছে মাত্র ৩৬ রানে। তারপর অধিনায়ক বিরাট কোহলি দেশে ফিরে গিয়েছেন।
মেলবোর্নের পিচ যে ব্যাটসম্যানদের জন্য স্বর্গরাজ্য, তাও নয়। যখন তিনি ব্যাট করতে এলেন তখন ৬১ রানে দুই উইকেট হারিয়ে ফেলেছে ভারত। ৬৪ রানের মাথায় হারাতে হয়েছে বিশ্বস্ত সঙ্গী পূজারাকেও। সেখান থেকে অজিঙ্কে রাহানে যেভাবে ভারতকে এগিয়ে নিয়ে গেলেন, তা এককথায় অনবদ্য। অধিনায়কের দুর্দান্ত শতরানের সুবাদেই মেলবোর্নে বৃষ্টিবিঘ্নিত দ্বিতীয় দিনের শেষে অ্যাডভান্টেজ পেয়ে গেল ভারত।
আর আজই নিজের টেস্ট কেরিয়ারের দ্বাদশ শতরানটি করলেন রাহানে। ভাল বলকে সম্মান দিয়ে, সুযোগ পেলেই রান তুলে নেওয়া, এটাই ছিল রাহানের এদিনের ইনিংসের মূল শক্তি। যদিও বার দুয়েক অজিদের সুযোগও দিয়েছিলেন অজিঙ্কে। কিন্তু রাহানের ক্যাচ ফেলে দিয়েছেন স্মিথ, ট্রেভিস হেডরা।
ভারতীয় অধিনায়ককে যোগ্য সঙ্গত করলেন রবীন্দ্র জাদেজাও। দিনের শেষে তাঁর সংগ্রহ ৪০ রান। ছোট অথচ কার্যকরী ইনিংস খেলেছেন ঋষভ পন্থও। তাঁর সংগ্রহ ২৯। বিহারী ২১ এবং পূজারা ১৭ রান করেছেন। দ্বিতীয় দিনের শেষে ভারতের স্কোর ৫ উইকেটে ২৭৭ রান। ইতিমধ্যেই ৮২ রানের লিড পেয়েছে টিম ইন্ডিয়া।
সার্বিকভাবে দ্বিতীয় দিনের শেষে টিম ইন্ডিয়া যে অজিদের থেকে অনেকটাই অ্যাডভান্টেজ পেয়েছে, সেটা হয়তো বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে, মেলবোর্নের পিচ আগের থেকে ব্যাটসম্যানদের জন্য সহজ হয়ে গিয়েছে। যা অজিদের জন্য ভরসার জায়গা। তবে, ভারত চাইবে প্রথম ইনিংসে যতটা বেশি সম্ভব লিড রাখা। কারণ, যে কোনও পিচেই চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করাটা সহজ কাজ হবে না। তাই তৃতীয় দিনে লিড আরও বাড়িয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে নামবেন আজকের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান রাহানে এবং জাদেজা।
ক্রীড়া প্রাঙ্গণ
মেলবোর্নে দ্বিতীয় টেস্টে দুরন্ত জয় রাহানের নেতৃত্বাধীন ভারতের।

বিক্রম দাঁ : অ্যাডিলেড টেস্ট ম্যাচে ৩৬ রানে অল আউট হয়ে লজ্জার রেকর্ড গড়েছিল ভারতীয় দল। মেলবোর্নে বক্সিং ডে টেস্টে ছিলেন না প্রথম দলের চার তারকা। আর মেলবোর্নে ভারতের রেকর্ডও খুব একটা সুখকর ছিল না। কিন্তু এ হেন প্রতিকূলতার মধ্যেই অজিঙ্কে রাহানের ভারত দেখিয়ে দিয়েছে, এভাবেও ফিরে আসা যায়।
বক্সিং ডে টেস্টে সিরিজে সমতা ফিরিয়ে যেন রূপকথার কাহিনি লিখে ফেলেছে টিম ইন্ডিয়া। তাই এই টেস্ট জয়ের স্বর্ণ পদক তার এই প্রাপ্য। অনবদ্য ঠান্ডা মাথার অধিনায়কত্ব হোক, কিংবা ব্যাট হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া, দ্বিতীয় টেস্টে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন আজিংকে রাহানে । তাই এদিন টুইট করে ক্যাপ্টেন বিরাট কোহলিও রানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
ম্যাচের আগে বিরাট বা সামির অনুপস্থিতি হোক বা খেলা চলাকালীন উমেশ যাদব এর ছোট হাওয়ার পরেও বোলিং ম্যানেজমেন্ট হোক সব দিকেই দারুন প্রতিভার পরিচয় দিয়েছে জিংকস। তবে এই ম্যাচ জেতার পর অধিনায়ক দলের ডেবিউ টান্টস সিরাজ আর শুভমণ এর অসাধারণ পারফরমেন্স এর কথা বলেছেন। আর বলবেননাই বা কেনো? ইশান্ত শর্মা ছিলেন না টেস্ট এ সেই জন্য তৃতীয় সিম বোলার হিসেবে যাদব সুযোগ পায়। তাতেই ভারতীয় দলের বোলিং ডিপার্টমেন্টকে দুর্বল বলেছিলেন অনেক ক্রিকেটর।
সমি দল থেকে বেরিয়ে গেলে সেখানে সিরাজ এর নতুন ও পুরনো বলে উইকেট নেওয়া র দক্ষতাই দারুন কাজে এসেছে ভারতের। এর পর গিল , আসন্ন দশ বছরে ব্যাটিং এ যে গিল এর রাজত্ব চলতে পারে এমনটা অনেক ক্রিকেটার বলছেন। যেমন টেকনিক তেমন শর্ট সিলেকশন । ভারতীয় ব্যাটিং এর ভবিষ্যত যে বেশ উজ্জ্বল তা বেশ পরিস্কার।
কোহলির নেতৃত্বেই প্রথম ম্যাচে লজ্জার সেই রেকর্ডটি করতে হয়েছে ভারতকে। তারপর আবার পিতৃত্বকালীন ছুটিতে দেশে ফিরে এসেছেন বিরাট। মেলবোর্ন টেস্টের আগে দল ছিল ছত্রভঙ্গ। ৪-০ তে হারের আশঙ্কা তাড়া করে বেড়াচ্ছিল দলকে। সেই আশঙ্কাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে মেলবোর্নে জয়ের শিরোপা উঠেছে ভারতের মাথায়। ক্যাপ্টেন কোহলি তাই বলছেন,”কী অসাধারণ জয়! গোটা দলের পারফরম্যান্স অনবদ্য। ছেলেদের জন্য অত্যন্ত খুশি। বিশেষ করে রাহানের জন্য। এর চেয়ে খুশির খবর হতে পারে না। এরপর আমাদের শুধু উপরের দিকে ওঠার পালা।