রুকস্যাক
ভ্রমণ : রোদঝলমলে ঝিলিমিলি।
দেবস্মিতা ঘোষ : শনিবার দিনটা আমরা সকলেই একটা হালকা ফুরফুরে মেজাজে থাকি, কারণ আগামীকাল রোববার। রোববার একটি খুশির দিন, ছুটির দিন। প্রিয়জনের আবদার কিংবা শরীর ও মনের আরামের নামে তুলে রাখা সপ্তাশেষেরএকদিন। আচ্ছা, ধরুন এমন হল রোববারের এক সকালে জানলা দিয়ে একফালি চিকচিকে সোনালি রোদ আপনার চোখে এসে পড়ল।
ঘুম ভেঙে উঠে আপনি নিজেকে খুঁজে পেলেন হাড় জিড়জিড়ে কংক্রিটের সভ্যতা থেকে অনেকখানি দূরে শাল পিয়ালের রোদ ঝলমলে জঙ্গলের মাঝখানে। হরেক রকম পাখির হরবোলা আর পাতায় পাতায় খসখসের শব্দ ছাড়া কোনোরকম শহুরে শব্দের ভিড় সেখানে নেই। ভেতরে ও বাইরে শুধু ভরে থাকে ঝিলমিল রঙের আলো। হ্যাঁ, অনেকটা স্বপ্নের মত। জায়গাটির নাম ঝিলিমিলি। কলকাতার ধর্মতলা থেকে সরাসরি বাসে করে পৌঁছেযাওয়া যায় বাঁকুড়া শহর থেকে ৭০ কিমি দূরের এই স্থানে। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে আরামবাগ হয়ে বাঁকুড়া পৌঁছে, বাঁকুড়া স্টেশন থেকে গাড়ি ধরলেও ঝিলিমিলি পৌঁছানো যায়। হাওড়া স্টেশন থেকে রূপসী বাংলা, আরণ্যক, পুরুলিয়া এক্সপ্রেস, হাওড়া-চক্রধরপুর ইত্যাদি ট্রেন আপনাকে বাঁকুড়া পৌঁছে দেবে।
ঝিলিমিলি তে রাত্রিবাসের মূল আকর্ষণ হল রিমিল ইকো ট্যুরিজম রিসর্ট। কেরালার ট্রি- হাউসের আদলে গড়ে তোলা শালের জঙ্গলের মাঝে গাছবাড়ি এবং তাঁবুতে এসি, গিজার সহ সমস্ত রকম আধুনিক সুবিধা দিয়ে অরণ্যে অভিনব রাত্রিবাসের ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। বীর, পিপিল, শাল, পিয়াল ইত্যাদি নামের গাছবাড়ি এবং তাঁবু গুলির ব্যালকনি থেকে অরণ্যের রাত্রি উপভোগের অভিজ্ঞতা এককথায় রোমাঞ্চকর। সৌভাগ্যক্রমে পূর্ণিমার রাতে গাছ- বাড়িতে উপস্থিত থাকলে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে চাঁদের আলোয় গোটা শাল-পিয়ালের জঙ্গলকে নিকষ অন্ধকারে ঘাপটি মেরে বসে থাকতে দেখা যায়। কানে ভেসে আসে সহস্র ঝিঁঝিঁ আর অনেক রকম পোকার ডাক , ঠিক যেন ছোটবেলায় পড়া ব্রহ্মদত্যির গল্পে নিশুত রাতের গাছমছমে পরিবেশ।
রিসর্টের রেস্টুরেন্টের সুস্বাদু বাঙালি থালি কিংবা চাইনিজ খাবারের আহারে-বাহারে ঝিলিমিলির ভ্রমণ জমে উঠবে বেশ। ছোটোদের জন্য জঙ্গলের মাঝে ছোট পার্কেরও ব্যবস্থা রয়েছে। পরদিন সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে শাল-পিয়ালের জঙ্গলের মাঝখান দিয়ে ফিতের মত বয়ে চলা আঁকাবাঁকা রাস্তায় গাড়ি ভাড়া করে বেরিয়ে পড়ুন তালবেড়িয়া ড্যাম, সুতান ফরেস্ট কিংবা মুকুটমণিপুর। গাড়ির ভাড়া পড়বে ২,৫০০ টাকার কাছাকাছি। বর্ষায় বা বর্ষার আগে পরে ঝিলিমিলি ভ্রমণের সুবিধা হল রাস্তার দুধারে সবুজের সমারোহ পেরিয়ে জঙ্গলের ভরপুর সবুজ এবং তালবেড়িয়ার ড্যামের টইটম্বুর জল বাঁকুড়ারএক অংশে বাংলার রূপের ডালি সাজিয়ে পর্যটকদের অপেক্ষায় বসে থাকে।
হাতে আরও কিছু বেশি সময় থাকলে কমবেশি ৩০ কিমির মধ্যে ঘুরে আসা যায় বেলপাহাড়ি, কাঁকরাঝোড় পাহাড় এবং ঝাড়গ্রাম। প্রকৃতির সবুজে ছুটি কাটানোর পাশাপাশি রিমিল রিসর্টের ট্রি-হাউসে থাকা-খাওয়া এবং অরণ্যের আদিম রূপ উপভোগের সুযোগ ঝিলিমিলি কে পর্যটকদের কাছে সমাদৃত করে। অল চিকি ভাষায় রিমিল কথার অর্থ‘মেঘ’, আর এই মেঘবাড়িতে রোদ ঝিলিমিলি অরণ্যের মাঝে স্বপ্নের মত ছুটি কাটাতে এখনই গুছিয়ে ফেলুন রুকস্যাক।
রিমিল ইকো-ট্যুরিজম গেস্ট হাউসম্যানেজার : তারক দত্ত ফোন নং : ৮৫৩৮৮৩৪০৩১
রুকস্যাক
ভ্রমণ : বাগুরানের বেলাভূমিতে।
দেবস্মিতা ঘোষ : বাতাসে শীতের আমেজ, সোনালী রোদের অকৃত্রিম স্নেহে আগলে নেওয়া স্বভাব, সুনীল আকাশ সবে মিলে প্রকৃতি যেন কোল পেতে বসে দুবাহু বাড়িয়ে অপেক্ষা করছে। আর আপনিও বুঝি নাগরিক ঘোড়দৌড়ে বিধ্বস্ত ????
বেশি নয়, ব্যস্ততার চোখরাঙানি থেকে এক কি দুই দিনের ছুটি বন্দোবস্ত করতে পারলেই মিলবে মুক্তির আস্বাদ। দিগন্তজোড়া নীলের মেলবন্ধন, চোখের পাতায় নেমে আসা বালির চড়, গর্জনরত সমুদ্রের ঢেউ এর মাঝে একান্তে অবসার কাটাতে পৌঁছে যান পূর্ব মেদিনীপুরের বগুড়ান জলপাই এর সমুদ্র তটে।
কলকাতার ধর্মতলা থেকে বাস ধরে বা হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেন এ কাঁথি পৌঁছে যান। কাঁথি থেকে টোটোতে ২৫০-৩০০ টাকার বিনিময়ে প্রায়ে ২৪ কিমি পথ অতিক্রম করে ঘন্টাখানেকের মধ্যেই পৌঁছে যান বগুড়ান জলপাই এর সমুদ্রতীরে। সমুদ্র এখানে শান্ত।
আর একটি অভিনব বিষয় হল জোয়ারের সময় সমুদ্র তীরের অনেক কাছে চলে আসে আবার ভাটার সময় অনেক দূরে চলে যায়। সারা তত জুড়ে দেখতে পাওয়া যায় লাল কাঁকড়ার অবাধে ছুটোছুটি করে লুকোচুরি খেলা। সমুদ্রে সূর্যোদয় সাক্ষী থাকা এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। তাই হাতে ছুটি একদিন বেশি থাকলে একদিন থেকে যাওয়ায় ভালো।
দিঘা, মান্ডারমনি বা জুনপুটের মতো পর্যটন এর ঘেরাটোপ বগুরান কে গ্রাস করেনি এখনো। তাই অফবিট এ নিরিবিলি ছুটি কাটানোর সেরা ঠিকানা হল বগুরান। জুনুপুট সমুদ্রতীর, দরিয়াপুর, কপালকুণ্ডলা মন্দির কাছাকাছির মধ্যেই ঘুরে দেখে নেয়া যায়। এখান থেকে আপনি আশে পাশের সমুদ্রসৈকত গুলিও ঘুরে আসতে পারেন যেমন বাঁকিপুট, দিঘা, মান্ডারমনি, তাজপুর।
তবে এখানে রাত্রিবাসের একমাত্র ঠিকানা হলো হোটেল সাগর নিরালা। কারণ খুব বেশিদিন হয়নি বগুরান বাংলার ভ্রমণ মানচিত্রে স্থান করে নিয়েছে। শহুরে জীবন যেসমস্ত সুবিধায় অভ্যস্ত সেই সব রকম সুবিধা এবং তিনবেলার আহার নিয়ে রাত্রিবাসের খরচ মোটামুটি কমবেশি ১০০০ টাকা।
এই শীতে তবে উইকেন্ডে প্ল্যান করেই ফেলুন বগুরান জলপাই সমুদ্রসৈকত ভ্রমণ। রোদ্দুরে পিঠ পেতে বসে বালিতে আঙ্গুল দিয়ে বিলি কেটে কেটে, কিংবা লাল কাঁকড়ার দল কে গর্ত অবধি ধাওয়া করে, কিংবা আবার ভোরের আধো আলোয় প্রিয়জনের সাথে ঝিনুক কুড়িয়ে দারুন কাটবে ছুটির দিনগুলো।