রুকস্যাক
বন্ধনমুক্তির বড়ন্তি।
দেবস্মিতা ঘোষ- মহামারীর মোকাবিলা পরিস্থিতিতে ঘরবন্দী থাকতে থাকতে সকলেরই প্রাণ ওষ্ঠাগত। বুক ভ’রে অক্সিজেন আর প্রাণ ভ’রে স্বস্তির ঘ্রাণ নিতে চাইলে চলুন আজ পায়ে পায়ে বেরিয়ে আসা যাক প্রকৃতির আরো গভীরে। দৈনিক কর্মব্যস্ততার রুটিন মাফিক জীবন থেকে নিয়ে নিন দু’দিনের ছুটি। পুরুলিয়ার ছোট্ট একটি আদিবাসী গ্রাম হল বড়ন্তি। গাড়িতে করে আসানসোলের নিকটবর্তী মুরাডি রেলস্টেশন থেকে ৬ কিমি দূরে বড়ন্তির অবস্থান। সময় লাগবে ঘন্টা চারেক। কাজেই লোকালট্রেনের অভাব বোধ দূরে সরিয়ে আপনিও সহজেই সামিল হন‘নিউ নর্মাল’-এ।
পঞ্চকোট বিহারীনাথ, জয়চন্ডী পাহাড়ের মাঝে অবস্থিত এই গ্রামটিতে চোখে পড়বে পুরুলিয়ার রুক্ষ প্রকৃতির বুকে রং-তুলিতে কাজ করা আদিবাসীদের কুঁড়েঘর গুলি আর আদরে যত্নে প্রকৃতির বুকে সাজানো তাদের গ্রামজোড়া সংসার। শীতের শেষে রুক্ষ পাহাড়ি প্রকৃতি সবটুকু উজাড় করে দেয় আদিম নগ্নতায়। আর ঠিক তার পরেই পলাশের সম্ভার নিয়ে বসন্ত আসে নিপুণ হাতে প্রকৃতির শৃঙ্গার করতে। পলাশ ফুলের টুকটুকে লাল রঙে প্রেমময়ী হয়ে ওঠে প্রকৃতি।
বড়ন্তি গ্রামটি আসলে রামচন্দ্রপুর সেচপ্রকল্পের পাশে অবস্থিত যা প্রায় ২ কিমি দীর্ঘ এক বিশাল জলাধার। নাম মুরাডি লেক। লেকের ঘন নীল জলে দুপাশে পাহাড়ের প্রতিবিম্ব এবং সবুজের চাদরে ঝিকঝিকে রোদ পড়ে অপরূপ সুন্দর লাগে। শীতকালে অগণিত পরিযায়ী পাখিরা ডানা মেলে উড়ে এসে ভিড় করে এই লেকে। লেকের সামনে দিকে বহুদূর বিস্তৃত লম্বা রাস্তায় দাঁড়িয়ে একই জায়গা থেকে আদিগন্তজুড়ে পুবে সূর্যোদয় এবং পশ্চিমে সূর্যাস্তের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য আপনাকে বিস্মিত করবে নিশ্চয়।
এখান থেকে আপনি পৌঁছে যেতে পারেন ১২ কিমি দূরে‘হীরক রাজার দেশে’ অর্থাৎ জয়চন্ডী পাহাড়ে। এছাড়া শাল, পিয়াল, মহুয়ার জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে গাড়িতে করে পৌঁছে যাওয়া যায় বিহারীনাথ পাহাড়, শুশুনিয়া পাহাড়, গড় পঞ্চকোট, পঞ্চেৎ ও মাইথন বাঁধ এবং কল্যাণেশ্বরী মন্দির। পাহাড়ি পথে ছোট ছোট ট্রেকিং-এর ব্যবস্থা রয়েছে যা এঁকেবেঁকে পথ দেখিয়ে পৌঁছে নিয়ে যায় পাহাড়ের মাথায়। স্প্যাঙ্গেল উইঙ্গস্ রিসর্ট, আকাশ মনি রিসর্ট, বনবীথি, মনপলাশ, পলাশবাড়ি ইকোলজিক্যাল রিসর্ট ইত্যাদি অনেকগুলি রিসর্ট এবং হোটেলে থাকার সুবন্দোবস্ত রয়েছে।
অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস বড়ন্তিতে ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত সময়। বড়ন্তিতে কালীপুজোমহাধুমধামের সঙ্গে পালিত হয় অক্টোবরে। অতএব, আর দেরি না করে রুকস্যাক গুছিয়ে বেরিয়ে পড়ুন বন্দীদশা ভেঙ্গে। মুক্ত বিহঙ্গের মত ডানা মেলে পৌঁছে যান পুরুলিয়ার পাহাড়ে পাহাড়ে।
রুকস্যাক
ভ্রমণ : বাগুরানের বেলাভূমিতে।
দেবস্মিতা ঘোষ : বাতাসে শীতের আমেজ, সোনালী রোদের অকৃত্রিম স্নেহে আগলে নেওয়া স্বভাব, সুনীল আকাশ সবে মিলে প্রকৃতি যেন কোল পেতে বসে দুবাহু বাড়িয়ে অপেক্ষা করছে। আর আপনিও বুঝি নাগরিক ঘোড়দৌড়ে বিধ্বস্ত ????
বেশি নয়, ব্যস্ততার চোখরাঙানি থেকে এক কি দুই দিনের ছুটি বন্দোবস্ত করতে পারলেই মিলবে মুক্তির আস্বাদ। দিগন্তজোড়া নীলের মেলবন্ধন, চোখের পাতায় নেমে আসা বালির চড়, গর্জনরত সমুদ্রের ঢেউ এর মাঝে একান্তে অবসার কাটাতে পৌঁছে যান পূর্ব মেদিনীপুরের বগুড়ান জলপাই এর সমুদ্র তটে।
কলকাতার ধর্মতলা থেকে বাস ধরে বা হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেন এ কাঁথি পৌঁছে যান। কাঁথি থেকে টোটোতে ২৫০-৩০০ টাকার বিনিময়ে প্রায়ে ২৪ কিমি পথ অতিক্রম করে ঘন্টাখানেকের মধ্যেই পৌঁছে যান বগুড়ান জলপাই এর সমুদ্রতীরে। সমুদ্র এখানে শান্ত।
আর একটি অভিনব বিষয় হল জোয়ারের সময় সমুদ্র তীরের অনেক কাছে চলে আসে আবার ভাটার সময় অনেক দূরে চলে যায়। সারা তত জুড়ে দেখতে পাওয়া যায় লাল কাঁকড়ার অবাধে ছুটোছুটি করে লুকোচুরি খেলা। সমুদ্রে সূর্যোদয় সাক্ষী থাকা এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। তাই হাতে ছুটি একদিন বেশি থাকলে একদিন থেকে যাওয়ায় ভালো।
দিঘা, মান্ডারমনি বা জুনপুটের মতো পর্যটন এর ঘেরাটোপ বগুরান কে গ্রাস করেনি এখনো। তাই অফবিট এ নিরিবিলি ছুটি কাটানোর সেরা ঠিকানা হল বগুরান। জুনুপুট সমুদ্রতীর, দরিয়াপুর, কপালকুণ্ডলা মন্দির কাছাকাছির মধ্যেই ঘুরে দেখে নেয়া যায়। এখান থেকে আপনি আশে পাশের সমুদ্রসৈকত গুলিও ঘুরে আসতে পারেন যেমন বাঁকিপুট, দিঘা, মান্ডারমনি, তাজপুর।
তবে এখানে রাত্রিবাসের একমাত্র ঠিকানা হলো হোটেল সাগর নিরালা। কারণ খুব বেশিদিন হয়নি বগুরান বাংলার ভ্রমণ মানচিত্রে স্থান করে নিয়েছে। শহুরে জীবন যেসমস্ত সুবিধায় অভ্যস্ত সেই সব রকম সুবিধা এবং তিনবেলার আহার নিয়ে রাত্রিবাসের খরচ মোটামুটি কমবেশি ১০০০ টাকা।
এই শীতে তবে উইকেন্ডে প্ল্যান করেই ফেলুন বগুরান জলপাই সমুদ্রসৈকত ভ্রমণ। রোদ্দুরে পিঠ পেতে বসে বালিতে আঙ্গুল দিয়ে বিলি কেটে কেটে, কিংবা লাল কাঁকড়ার দল কে গর্ত অবধি ধাওয়া করে, কিংবা আবার ভোরের আধো আলোয় প্রিয়জনের সাথে ঝিনুক কুড়িয়ে দারুন কাটবে ছুটির দিনগুলো।