রুকস্যাক
আমার চোখে দেখা দিল্লি – আগ্রা (পর্ব – ৮)
পর্ব – ৮
রীতা বসু : আগ্রা থেকে সকাল দশটার ভলভ বাস ছাড়ল দুপুর বারটায়। বাসে বসে হিন্দী ছবি বাহুবলী (২) দেখতে দেখতে চললাম। হোটেলে পৌঁছাতে বিকাল গড়াল। তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে পরলাম তখন সন্ধ্যা নেমেছে। আমরা ছ’সীটের ক্যাব নিলাম কারন আমরা পাঁচজন সদস্য। ঠিক করেছিলাম ইন্ডিয়া গেট দেখে করল বাগে যাব কিছু কেনাকাটা করতে কিন্তু ড্রাইভার সাহেব জানালেন ইন্ডিয়া গেট দেখে করলবাগ পৌঁছাতে পৌঁছাতে বাজার বন্ধ হয়ে যাবে সুতরাং ইন্ডিয়া গেটে না গিয়ে আমরা সোজা করলবাগেই গেলাম।বিশাল বাজার কি যে ওখানে নেই তাই বলা মুস্কিল। তার উপর সামনেই দেওয়ালি সুতরাং মেয়েদের রকমারি চুড়ি,মালা আর ক্লিপের ছড়াছড়ি। এখানে ঘুরে ঘুরে কিছু টোকেন গিফ্ট কিনলাম।সেদিন আর কিছু দেখা হলো না, হোটেলে ফিরে এলাম।
পরদিন হোটেল থেকেই টুরিষ্ট বাসে শহর দেখতে বেরোলাম। প্রথমেই গেলাম বিরলা মন্দির দেখতে। এটাকে লক্ষ্মী-নারায়ন মন্দিরও বলা হয়। বাসে চলতে চলতে গান্ধীজীর ডান্ডি অভিজানের বিখ্যাত মূর্তি যেটার ছবি আমাদের টাকায় ছাপা আছে দেখলাম। এর পর এসেব্লী হাউস,সংসদদের আবাসন, সোনিয়া গান্ধীর বাসস্থান,চাঁদনী গেট,তিনমূর্তি ভবন সবই দেখলাম বাইরে থেকে।এরপর দিল্লী টেক্সটাইল। এখানে অনেকে কিছু কিনলেন।তারপর ইন্ডিয়া গেট,রাস্ট্রপতি ভবন। রোদের তাপ এমন করা যে আমার বাস থেকে নামতে ইচ্ছা হলো না। দূর থেকেই দেখলাম।
এলাম কুতুব মিনারে। ৭৩ মিটার উঁচু এই বিল্ডিং নির্মান শুরু করেন কুতুব-উদ-দীন আইবক ১১৯৩ সালে ভারতের শেষ হিন্দু রাজত্বের অবসান ঘটিয়ে মুসনমান রাজত্ব স্থাপন করার স্বারক হিসাবে।পাঁচতলা বিশিষ্টএই মিনারের প্রথম দুইতলা লাল বেলে পাথরে তৈরী বাকি তিনতলা মার্বেল পাথর ও লাল বেলে পাথরে তৈরী।এর নীচের দিকের পরিধি ১৪.৩২ মিটার একদম উপরে এর পরিধি ২.৭ মিটার। কুতুব উদ্দিন মিনারটি নির্মান শুরু করেন,তিন তলা পর্যন্ত তৈরী করেন ইল-তুত-মিস এবং শেষ করেন ফিরজ শা তুঘলক। এটা ভরতবর্ষে তো বটেই UNESCO পর্যন্ত মিনারটিকে সর্বোচ্চ মিনার এবং World heritage বলে অভিহিত করেছে। মিনারে ওঠার সিঁড়ি আছে।প্রথমদিক জনসাধারনের উপরে ওঠার অনুমতি ছিল কিন্তু একবার দুর্ঘটনায় ৭৫জন পড়ুয়ার মৃত্যু হবার পর উপরে ওঠা নিসিদ্ধ হয়েছে।এখানে একটি অপেক্ষাকৃত ছোটো লোহার পিলার দেখলাম সেটাতে এতবছরেও জং ধরে নি। শুনলাম এটা দেখতে সরু হলেও কিছুতেই দুহাতের বেষ্টনির মধ্যে নেওয়া যায় না। রেলিং দিয়ে ঘেরা আছে নইলে একবার চেষ্টা করে দেখতাম।
এলাম লোটাস টেম্পলে। রোদকে অগ্রাহ্য করে অনেক ছবিতে দেখা টেম্পল দেখতে ছুটলাম বেশ কিছুটা পথ হেঁটে। ফিরেছি অবশ্য অটোতে চেপে। ফিরে এসে শুনলাম আমাদের লাল কেল্লা দেখাবে না পাশ দিয়ে ফিরে যাবে হোটেলে। গাইডের কথায় ওখানে নাকি কিছু দেখার নেই। বিরক্ত হয়ে আমরা বাস ছেড়ে দিলাম কিন্তু সেদিন আমাদের লাল কেল্লা দেখা হলো না। দিল্লী যে কেমন জায়গা হাড়ে হাড়ে বুঝলাম।
ছ’ সীটের ক্যাব সব সময় পাওয়া যায় না।আমাদের হাতে সময় কম অপেক্ষা করার উপায় নেই।অগত্যা দুটো অটো নিলাম। একটাতে তিনজন অন্যটাতে দুজন উঠলাম। রাস্তায় এমন জ্যাম কলকাতার জ্যাম তার কাছে নস্যি।আমাদের অটো এদিক ওদিক পাশ কাটিয়ে এক জায়গায় নামিয়ে দিল সেখান থেকে লাল কেল্লার প্রাচীর দেখা যাচ্ছিল। সুতরাং আমরা দ্বিরুক্তি না করে নেমে পরলাম। এদিকে অন্য অটোর দেখা নেই।সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো।সামনে দেখলাম সুনেরা মসজিত। বুঝলাম আমাদের ভুল জায়গায় নামিয়ে দিয়েছে। সঠিক জায়গা গুগুল ম্যাপেও পাওয়া যাচ্ছে না। একেক বারে একেক রকম দেখছি। হয়তো সিগন্যাল ঠিকমত পাচ্ছিনা।আমাদের মনের অবস্থা তখন এমন যে সে দিকে লক্ষ্য করার মতো অবস্থাও ছিল না।ঈশ্বর সহায় কিছু ভালো মানুষ এখনও আছে। এক টোটোওলা অন্যঅটোর যাত্রীদের উদ্বিগ্ন অবস্থা দেখে এগিয়ে এসে সাহায্যের জন্য প্রস্তুত হলো। ঐ অটোর একজন যাত্রী ফোন করে টোটোওলা কে ধরিয়ে দিল। টোটোওলাস্থানিয় কোনো লোককে ফোন দিতে বলল। ভাগ্যক্রমে আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম তার উল্টো দিকেই ছিল একটি সরকারি গ্যারেজ গ্যারেজের সিকিউরিটি গার্ডকে ফোনটা দিলাম৷ টোটো ওলা তার কাছ থেকে আমাদের সঠিক অবস্থান জেনে নিয়ে বাকিদের নিয়ে এলো।অবশেষে আমরা লাল কেল্লা না দেখেই স্বস্তিতে সেই টোটোতে হোটেলে ফিরে এলাম।
পরদিন সকালে আমরা আবার লাল কেল্লা দেখার জন্য প্রস্তুত হলাম। টোটো করে এসে পৌঁছালাম।সামনে জামা মসজিত। আমাদের হাতে সময় কম থাকায় সেদিকে গেলাম না। টিকিট কেটে লাল কেল্লায় গেলাম। অনেক জায়গায় দড়ি বেঁধে প্রবেশ নিষেধ লেখা আছে। উঁচু বারান্দার নীচ থেকে যতটুকু দেখা যায় দেখলাম। এলাম অপূর্ব কারুকাজ করা দেওয়ানি আমে। ভাবতে অবাক লাগে পুরো ছাদটা রূপো দিয়ে মোরা ছিল শুনে।দেখলাম শিশ মহল। ময়ূর সিংহাসন যেখানে বসান ছিল সে জায়গাও দড়ি দিয়ে ঘেরা কাছে গেলে দেখতে পেতাম তার কারুকাজ।সামনে একটা সাদা পাথরের বেদী। জানলাম ওটার দুপাশে দুজন লোক দাঁড়িয়ে আমজনতার আর্জি সম্রাটকে জানাত। পিছনে একটু উঁচুতে সম্রাজ্ঞীর বসার আসন,সেই সময় চিক দিয়ে ঢাকা থাকতো। দেখলাম নাচমহল।
রোদ বেশ চড়া,আমাদের সময়ও ফুরিয়ে আসছে।বেলা বারটার মধ্যে হোটেল ছাড়তে হবে।আমাদের ভ্রমন শেষ হলো। অপূর্ব স্মৃতি আর বেদনাহত মন নিয়ে আমরা কলকাতায় ফিরে চললাম।
(শেষ)
রুকস্যাক
ভ্রমণ : বাগুরানের বেলাভূমিতে।
দেবস্মিতা ঘোষ : বাতাসে শীতের আমেজ, সোনালী রোদের অকৃত্রিম স্নেহে আগলে নেওয়া স্বভাব, সুনীল আকাশ সবে মিলে প্রকৃতি যেন কোল পেতে বসে দুবাহু বাড়িয়ে অপেক্ষা করছে। আর আপনিও বুঝি নাগরিক ঘোড়দৌড়ে বিধ্বস্ত ????
বেশি নয়, ব্যস্ততার চোখরাঙানি থেকে এক কি দুই দিনের ছুটি বন্দোবস্ত করতে পারলেই মিলবে মুক্তির আস্বাদ। দিগন্তজোড়া নীলের মেলবন্ধন, চোখের পাতায় নেমে আসা বালির চড়, গর্জনরত সমুদ্রের ঢেউ এর মাঝে একান্তে অবসার কাটাতে পৌঁছে যান পূর্ব মেদিনীপুরের বগুড়ান জলপাই এর সমুদ্র তটে।
কলকাতার ধর্মতলা থেকে বাস ধরে বা হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেন এ কাঁথি পৌঁছে যান। কাঁথি থেকে টোটোতে ২৫০-৩০০ টাকার বিনিময়ে প্রায়ে ২৪ কিমি পথ অতিক্রম করে ঘন্টাখানেকের মধ্যেই পৌঁছে যান বগুড়ান জলপাই এর সমুদ্রতীরে। সমুদ্র এখানে শান্ত।
আর একটি অভিনব বিষয় হল জোয়ারের সময় সমুদ্র তীরের অনেক কাছে চলে আসে আবার ভাটার সময় অনেক দূরে চলে যায়। সারা তত জুড়ে দেখতে পাওয়া যায় লাল কাঁকড়ার অবাধে ছুটোছুটি করে লুকোচুরি খেলা। সমুদ্রে সূর্যোদয় সাক্ষী থাকা এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। তাই হাতে ছুটি একদিন বেশি থাকলে একদিন থেকে যাওয়ায় ভালো।
দিঘা, মান্ডারমনি বা জুনপুটের মতো পর্যটন এর ঘেরাটোপ বগুরান কে গ্রাস করেনি এখনো। তাই অফবিট এ নিরিবিলি ছুটি কাটানোর সেরা ঠিকানা হল বগুরান। জুনুপুট সমুদ্রতীর, দরিয়াপুর, কপালকুণ্ডলা মন্দির কাছাকাছির মধ্যেই ঘুরে দেখে নেয়া যায়। এখান থেকে আপনি আশে পাশের সমুদ্রসৈকত গুলিও ঘুরে আসতে পারেন যেমন বাঁকিপুট, দিঘা, মান্ডারমনি, তাজপুর।
তবে এখানে রাত্রিবাসের একমাত্র ঠিকানা হলো হোটেল সাগর নিরালা। কারণ খুব বেশিদিন হয়নি বগুরান বাংলার ভ্রমণ মানচিত্রে স্থান করে নিয়েছে। শহুরে জীবন যেসমস্ত সুবিধায় অভ্যস্ত সেই সব রকম সুবিধা এবং তিনবেলার আহার নিয়ে রাত্রিবাসের খরচ মোটামুটি কমবেশি ১০০০ টাকা।
এই শীতে তবে উইকেন্ডে প্ল্যান করেই ফেলুন বগুরান জলপাই সমুদ্রসৈকত ভ্রমণ। রোদ্দুরে পিঠ পেতে বসে বালিতে আঙ্গুল দিয়ে বিলি কেটে কেটে, কিংবা লাল কাঁকড়ার দল কে গর্ত অবধি ধাওয়া করে, কিংবা আবার ভোরের আধো আলোয় প্রিয়জনের সাথে ঝিনুক কুড়িয়ে দারুন কাটবে ছুটির দিনগুলো।