Connect with us

রুকস্যাক

আমার চোখে দিল্লী – আগ্রা (পর্ব – ৪)

Published

on

Social Update Bengali News Image
Image Source Twitter

পর্ব ৪, আগ্রা ফোর্ট 

রীতা বসু : আগ্রা ফোর্ট নির্মান করেন সম্রাট আকবর।লাল বেলে পাথরের তৈরী এই ফোর্টের পরিধি বিশাল।সামনে দাঁড়ালে সম্ভ্রম জাগে।টিকিট কেটে আমরা ফোর্টের সামনে এসে দাঁড়ালাম।উঠতে হবে এখন বিশাল চড়াই পথে। প্রসস্ত পাথর বাঁধানো শ্লোপিং রাস্তা অনেকটাই, বয়স জনিত কারনে আমার একটু হাঁপ ধরছিল বটে তবে ওটা খুব কষ্টকর নয়।বিচিত্র এই পথে কথা বললে কোনো প্রতিধ্বনি হয় না কিন্তু হাতে তালি দিলে তার প্রতিধ্বনি বহুদূর ছড়িয়ে পরে। শত্রুর আগমন বার্তা ছড়িয়ে দেবার এক অপূর্ব পদ্ধতি।চড়াই পথটুকু অতিক্রম করে আমরা দূর্গের প্রধান ফটকে এসে দাঁড়ালাম। বিশাল ফটক পেরিয়ে প্রথমেই চোখে পরে সম্রাট জাহাঙ্গীরের বাথ টাব। এটা হয়তো পর্যটকদের দেখবার সুবিধার্থে বাইরে এনে রাখা হয়েছে, এটা সম্রাটের হামাম বা স্নানাগারে থাকার কথা কিন্তু ভিতরের কোনো প্রকষ্ঠে পর্যটকদের যাবার অনুমতি নেই।সব ঘর তালা বন্ধ।সে যাই হোক বাথ টাবটি বিশাল একটি সোনালি পাথর কেটে তৈরী করা। উচ্চতাও অনেকটা, উঠবার জন্য ওটার সঙ্গেই সিঁড়ি আছে।সোনা রূপার কারুকার্য ছিল তাতে, মনি মানিক্য থাকাও অসম্ভব নয় কিন্তু তার আর কিছুই অবশিষ্ট নেই,শুধু সে গুলো বসাবার ক্ষতগুলি এখনও বিরাজমান।

একটি দরজা পেরিয়ে আমরা এসে দাঁড়ালাম একটি প্রশস্ত প্রাঙ্গনে যাকে ঘিরে রয়েছে অনেক প্রকষ্ঠ।এর কারুকাজ অনেকটা banble বা বালার মতো বলে এটাকে bangle house আখ্যা দেওয়া হয়েছে। অনুমান করা হয় এটি নুরজাহান মহল।কারন এর পাশেই আছে জাহাঙ্গীর মহল।সম্রাট আকবর লাল পাথরে দূর্গটি নির্মান করেছিলেন পরবর্তি কালে যিনিই সম্রাট হয়েছেন আপন মহল পছন্দমতো পরিবর্তিত করেছেন।সম্রাট আকবরের যেমন পছন্দ ছিল লাল বেলে পাথর সম্রাট জাহাঙ্গীর তেমনি পছন্দ করতেন সাদা পলেস্তারা(অনেকটা আমাদের প্লাস্টার অব প্যারিসের মতো)।এই সাদা পলেস্তারা দেখেই জাহাঙ্গীর মহল চেনা যায়।

পাথরের উঁচু উঁচু সিঁড়ি বেয়ে উঠে এলাম দোতলায়।প্রথমেই সম্রাট সাজাহানের প্রিয়তমা প্রথমা কন্যা জাহানারা মহল।এখানকার জাফরিকাটা বারান্দা থেকে তাজমহল দেখা যায়।পাশেই সাদা পাথরে নির্মিত সম্রাট সাজাহানের মহল।এই মহলেই সম্রাট শেষ জীবনে বন্দী ছিলেন।মহলের কারুকাজ এত সুন্দর যে চোখ ফেরানো যায় না। উপরে সেই ঝরকা যেখানে বসে সম্রাট সাজাহান তাজমহল দেখতেন সারাদিন।

এবার একটু ইতিহাস জানি।সম্রাট সাজাহানের দুই কন্যা ও চারপুত্রের নাম আমরা সকলেই জানি। পুত্রদের মধ্যে সম্রাট হবার যোগ্যতা ছিল প্রথমপুত্র দারাসিকো আর কনিষ্ঠপুত্র আরঙ্গজেবের।আরঙ্গজেব ছিলেন তাঁর ধর্মের প্রতি নিষ্ঠাবান।আর দারাসিকো ছিলেন নরমপন্থি। প্রপিতামহ আকবরের মতোই সব ধর্মের ভালোটা নিতে তিনি পছন্দ করতেন।সেই কারনেই দুই ভাই এর মধ্যে বন্ধুত্বর চাইতে শত্রুতা ছিল বেশি। সম্রাট সাজাহান তাঁর তিন পুত্রকে তিনটি প্রদেশের দায়িত্ব দিয়েছিলেন।সেই মত দাক্ষ্যিনাত্বের শাশক ছিলেন অারঙ্গজেব। প্রথম পুত্র দারাসিকো ছিলেন সম্রাটের বিশেষ স্নেহভাজন,তিনি পিতার সাথে আগ্রাতেই থাকতেন ও রাজকার্যে সহায়তা করতেন।

সম্রাট যখন দারাসিকোকে তাঁর উত্তরসূরি বা যুবরাজ ঘোষনা করেন তখন দাক্ষিনাত্য থেকে অরঙ্গজেব সম্রাটের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনা করেন। সুদক্ষ পরিচালনায় দারাসিকো সেই বিদ্রোহ দমন করেন। নিপুন যোদ্ধা আরঙ্গজেব এই হার মেনে নিতে পারেন নি।তিনি কূটনীতি ভালই জানতেন, সম্রাটের অগোচরে তিনি অন্য দুই ভাইকে মিষ্ট ভাষন ও নানা প্রলোভন দেখিয়ে নিজের দলে টেনে নেন ও সম্রাটের বিদ্রোহী করে তোলেন।

বৃদ্ধ সম্রাট যখন বয়স জনিত কারনে অসুস্থ তখন তিন ভাই একযোগে সর্বশক্তি নিয়ে আগ্রা ফোর্ট দখল করতে আসেন। দারাসিকো নিঃসন্দেহে নিপুন যোদ্ধা ছিলেন কিন্তু নানা দিক থেকে বিভ্রান্তিকর খবর আসাতে তিনি দিশাহারা হয়ে পরেন।আরঙ্গজেব ঠিক কোনদিক থেকে আক্রমন করতে আসছেন তার সঠিক খবর তিনি পান না। অতর্কিত আক্রমনে তিনি আরঙ্গজেবের হাতে পরাস্ত ও বন্দী হন। দারাসিকো বন্দী এ কথা সম্রাটের বিশ্বাস হয় না,তিনি দূর্গদ্বার উন্মোচনের অনুমতি দেন না।আরঙ্গজেব মাসাধিক কাল দূর্গ অবরোধ করে রাখেন তাতে কোনো সুরাহা না হওয়ায় তিনি দূর্গের ভিতরে জল আসার সমস্ত পথ বাইরে থেকে বন্ধ করে দেন ও দারাসিকোকে হত্যা করে তাঁর ছিন্ন মস্তক সম্রাটকে উপঢৌকন পাঠান। এই ঘটনায় সম্রাট একেবারে ভেঙে পরেন ও দূর্গদ্বার খুলে দেবার অনুমতি দেন।আরঙ্গজেব সসৈন্যে দূর্গে প্রবেশ করেন ও সম্রাটকে বন্দী করেন। শেষদিন পর্যন্ত সম্রাট তাঁর মহলে একাকী বন্দীছিলেন পাশে ছিলেন তাঁর প্রিয়তমা কন্যা জাহানারা। এরপর আরঙ্গজেব অপর দুই ভাই সূজা ও মুরাদকেও বন্দী করে হত্যা করেন ও নিজেকে সম্রাট বলে ঘোষনা করেন।

দূর্গের ভিতরে ছিল মাদ্রাসা, ছিল ছাত্রাবাস আরও অনেক কিছু তার কোনটা কি তা আর সঠিকভাবে জানার উপায় নেই সবই অনুমান। পর্যটকরা সাধারনতঃ সাজাহান মহলই দেখতে যান আমরাও এদিক ওদিক কিছুটা ঘুরে জনমানব হীন দোতলার একটি কোনে বসে জল পান করতে করতে একঝাঁক টিয়া পাখিকে দেখলাম উড়ে এসে বসতে।ওদিকে সূর্য্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পরছে আমাদের এখনও তাজমহল দেখা বাকি সুতরাং ফেরার পথ ধরতে হবে।নেমে এলাম একতলায় আবার সেই পাথরের সিঁড়ি বেয়ে।একতলায় সুন্দর কারুকাজ করা দেওয়ানি আম দেখলাম, দেখলাম সম্রাটের বসবার জায়গা। এগিয়ে এসে সামনে একজন ইংরেজের সমাধি দেখে বিস্মিত হলাম। জানলাম ইনি সিপাহী বিদ্রোহের সময় মিলিটারি চিফ ছিলেন। এঁনার প্রথমে গুলি লাগে চিকিৎসাধিন অবস্থায় কলেরায় তাঁর মৃত্যু ঘটে এবং তাঁকে এখানেই সমাধিস্থ করা হয়। সেই চড়াই রাস্তা এখন উৎরাই তাই নামতে বিশেষ কষ্ট হলো না।এবার আমাদের গন্তব্য তাজমহল।

Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রুকস্যাক

ভ্রমণ : বাগুরানের বেলাভূমিতে।

Published

on

Social Update Bengali News Image

দেবস্মিতা ঘোষ : বাতাসে শীতের আমেজ, সোনালী রোদের অকৃত্রিম স্নেহে আগলে নেওয়া স্বভাব, সুনীল আকাশ সবে মিলে প্রকৃতি যেন কোল পেতে বসে দুবাহু বাড়িয়ে অপেক্ষা করছে। আর আপনিও বুঝি নাগরিক ঘোড়দৌড়ে বিধ্বস্ত ????

বেশি নয়, ব্যস্ততার চোখরাঙানি থেকে এক কি দুই দিনের ছুটি বন্দোবস্ত করতে পারলেই মিলবে মুক্তির আস্বাদ। দিগন্তজোড়া নীলের মেলবন্ধন, চোখের পাতায় নেমে আসা বালির চড়, গর্জনরত সমুদ্রের ঢেউ এর মাঝে একান্তে অবসার কাটাতে পৌঁছে যান পূর্ব মেদিনীপুরের বগুড়ান জলপাই এর সমুদ্র তটে।

কলকাতার ধর্মতলা থেকে বাস ধরে বা হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেন এ কাঁথি পৌঁছে যান। কাঁথি থেকে টোটোতে ২৫০-৩০০ টাকার বিনিময়ে প্রায়ে ২৪ কিমি পথ অতিক্রম করে ঘন্টাখানেকের মধ্যেই পৌঁছে যান বগুড়ান জলপাই এর সমুদ্রতীরে। সমুদ্র এখানে শান্ত।

আর একটি অভিনব বিষয় হল জোয়ারের সময় সমুদ্র তীরের অনেক কাছে চলে আসে আবার ভাটার সময় অনেক দূরে চলে যায়। সারা তত জুড়ে দেখতে পাওয়া যায় লাল কাঁকড়ার অবাধে ছুটোছুটি করে লুকোচুরি খেলা। সমুদ্রে সূর্যোদয় সাক্ষী থাকা এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। তাই হাতে ছুটি একদিন বেশি থাকলে একদিন থেকে যাওয়ায় ভালো।

দিঘা, মান্ডারমনি বা জুনপুটের মতো পর্যটন এর ঘেরাটোপ বগুরান কে গ্রাস করেনি এখনো। তাই অফবিট এ নিরিবিলি ছুটি কাটানোর সেরা ঠিকানা হল বগুরান। জুনুপুট সমুদ্রতীর, দরিয়াপুর, কপালকুণ্ডলা মন্দির কাছাকাছির মধ্যেই ঘুরে দেখে নেয়া যায়। এখান থেকে আপনি আশে পাশের সমুদ্রসৈকত গুলিও ঘুরে আসতে পারেন যেমন বাঁকিপুট, দিঘা, মান্ডারমনি, তাজপুর।

তবে এখানে রাত্রিবাসের একমাত্র ঠিকানা হলো হোটেল সাগর নিরালা। কারণ খুব বেশিদিন হয়নি বগুরান বাংলার ভ্রমণ মানচিত্রে স্থান করে নিয়েছে। শহুরে জীবন যেসমস্ত সুবিধায় অভ্যস্ত সেই সব রকম সুবিধা এবং তিনবেলার আহার নিয়ে রাত্রিবাসের খরচ মোটামুটি কমবেশি ১০০০ টাকা।

এই শীতে তবে উইকেন্ডে প্ল্যান করেই ফেলুন বগুরান জলপাই সমুদ্রসৈকত ভ্রমণ। রোদ্দুরে পিঠ পেতে বসে বালিতে আঙ্গুল দিয়ে বিলি কেটে কেটে, কিংবা লাল কাঁকড়ার দল কে গর্ত অবধি ধাওয়া করে, কিংবা আবার ভোরের আধো আলোয় প্রিয়জনের সাথে ঝিনুক কুড়িয়ে দারুন কাটবে ছুটির দিনগুলো।

Continue Reading
Advertisement
Advertisement
Advertisement e

আমাদের ফেসবুকে পেজ লাইক করুন

Advertisement
Advertisement

জনপ্রিয় পোস্ট