রুকস্যাক
আমার চোখে দিল্লী – আগ্রা (পর্ব – ২)
পর্ব – ২
রীতা বসু : সাধারনতঃ দিল্লী আগ্রার পর্যটকরা প্রথমে দিল্লীতেই যান তার কারন মনে হয় দিল্লী যাবার যে দ্রুতগতির ট্রেন আছে আগ্রায় যাবার তেমন সুব্যবস্থা নেই। আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল তাজমহল,আগ্রা ফোর্ট আর ফতেপুর সিক্রি দেখা তাই আমরা উল্টো পথেই হাঁটলাম অর্থাৎ আগ্রাকেই প্রথম গন্তব্য বলে ঠিক করলাম।
এগারই অক্টোবর সকাল দশটায় আমরা আগ্রায় পৌঁছালাম।স্টেশন থেকেই অটো ঠিক করে নিলাম আগ্রার দ্রষ্টব্য স্থানগুলো পরিদর্শনের জন্য। হোটেল বুক করাই ছিল,অটো আমাদের সেখানে পৌঁছে দিয়ে দুঘন্টার বিরতি নিল।
হোটেলটি সুন্দর সাজানো গোছানো, সবচেয়ে সুন্দর এর রুফটপ রেস্ট্রুরেন্টটি যেখান থেকে আমরা তাজমহলকে প্রথমেই একঝলক দেখে নিলাম। হোটেলের একটাই অসুবিধা ছিল বাথরুমের চৌকাঠ এত নীচু যে স্নানের জল ঘরে চলে আসত, রিপোর্ট করার সঙ্গে সঙ্গেই অবশ্য সেটা মুছে দিত দেখে আমরা বলেছিলাম চৌকাঠটা আর একটু উঁচু করে দিলেই তো সমস্যা মিটে যায়। ম্যানেজারের কথায় জানলাম হোটেলটি তাজমহলের পাঁচশ মিটারের মধ্যে অবস্থিত। এই পরিধির মধ্যে কোনো কিছু অদল বদল বা ভেঙে যাওয়া অংশ পুনঃনির্মান করতে হলে তাজমহল সিকিউরিটির অনুমতি নিয়ে হয় যা বেশ সময় এবং পরিশ্রম সাপেক্ষ।
বেলা বারটায় আমাদের সারথি তার রথ নিয়ে হাজির,আমরা প্রস্তুতই ছিলাম, সময় নষ্ট না করে বেড়িয়ে পরলাম। প্রথমেই উদরপূর্তির জন্য গেলাম”সের ই পান্জাব”এ। এবার চললাম “বিবি কা মকবারা” যার চলতি নাম বেবী তাজ দেখতে।এটাকে বেবী তাজ বলা হয় কারন এর গঠন বাইরে থেকে তাজমহলের মতই।শোনা যায় এই বেবী তাজই সম্রাট সাজাহনের তাজমহল তৈরীর অনুপ্রেরনা।
বেবী তাজ তৈরী করেন সম্রাট জাহাঙ্গীরের পত্নী বেগম নুরজাহান তাঁর পিতা আব্বাস আলি বেগের সমাধিতে।ইতিহাস বলে বেগম নুরজাহানের বিবাহপূর্ব নাম ছিল মেহের উন্নেসা।আব্বাস আলি বেগ ছিলেন সম্রাট আকবরের ওমরাহ।মেহের উন্নেসার রূপে মুগ্ধ হন আকবর পুত্র সেলিম। খবরটি প্রচার হতেই সম্রাট তড়িঘরি মেহের উন্নেসার বিয়ের ব্যবস্থা করেন তাঁর পাঁচ হাজারি মনসাবদার সের অফগানের সাথে।সম্রাট আকবরের মৃত্যুর পর সেলিম সম্রাট হয়ে জাহাঙ্গির নাম ধারন করেন এবং সের আফগানকে পরাস্ত করে হত্যা করেন।মেহের উন্নেসাকে তাঁর কন্যা লাডলি বেগম সহ দিল্লীতে নিয় আসেন জাহাঙ্গির এবং মেহের উন্নেসাকে তিনি বিবাহ করেন তখন তাঁর নাম হয় নুরজাহান।নুরজাহান ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিমতী মহিলা, রাজ্য পরিচালনাতেও ছিলেন তিনি দক্ষ। সেইসময় থেকেই দেওয়ানী-আমে সম্রাটের আসনের পিছনে চিকের আড়ালে সম্রাজ্ঞীর বসবার আসন স্থাপন হয়, লালকেল্লায় তার নিদর্শন আছে।
এবার আসি বেবীতাজে।সমধি স্থলে জুতো পরে যাওয়া নিসিদ্ধ তাই জুতো জমা রেখে খালি পায়ে আমাদের চলতে হল।স্বেত পাথরের চাতাল রোদের তাপে তেতে আগুন হয়ে আছে পা রাখা কষ্টকর।পর্যটকদের সুবিধার্থে কিছুটা দূরে দূরে ভিজা কার্পেট পাতা আছে।আমরা গরম পাথরের উপর দিয়ে ছুটে গিয়ে ভিজা কার্পেটে ক্ষনিক দাঁড়াচ্ছিলাম। ভিতরে বেশ কয়েকটি প্রকষ্ট, তার ঠিক মাঝেরটিতে আছে বেগম নুরজাহানের মাতা পিতার সমাধি বাকিগুলোতে আছে তাঁদের পরিজনদের সমাধি।দেওয়ালে ও ছাদে সুন্দর নক্সা করা ছিল,রঙিন পাথরের কারুকাজও কিছু ছিল কিন্তু দীর্ঘকাল রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে সেগুলো হতশ্রী হয়ে শুধু ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। এরপর আমাদের গন্তব্য মেহতাব বাগবাগ।
রুকস্যাক
ভ্রমণ : বাগুরানের বেলাভূমিতে।
দেবস্মিতা ঘোষ : বাতাসে শীতের আমেজ, সোনালী রোদের অকৃত্রিম স্নেহে আগলে নেওয়া স্বভাব, সুনীল আকাশ সবে মিলে প্রকৃতি যেন কোল পেতে বসে দুবাহু বাড়িয়ে অপেক্ষা করছে। আর আপনিও বুঝি নাগরিক ঘোড়দৌড়ে বিধ্বস্ত ????
বেশি নয়, ব্যস্ততার চোখরাঙানি থেকে এক কি দুই দিনের ছুটি বন্দোবস্ত করতে পারলেই মিলবে মুক্তির আস্বাদ। দিগন্তজোড়া নীলের মেলবন্ধন, চোখের পাতায় নেমে আসা বালির চড়, গর্জনরত সমুদ্রের ঢেউ এর মাঝে একান্তে অবসার কাটাতে পৌঁছে যান পূর্ব মেদিনীপুরের বগুড়ান জলপাই এর সমুদ্র তটে।
কলকাতার ধর্মতলা থেকে বাস ধরে বা হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেন এ কাঁথি পৌঁছে যান। কাঁথি থেকে টোটোতে ২৫০-৩০০ টাকার বিনিময়ে প্রায়ে ২৪ কিমি পথ অতিক্রম করে ঘন্টাখানেকের মধ্যেই পৌঁছে যান বগুড়ান জলপাই এর সমুদ্রতীরে। সমুদ্র এখানে শান্ত।
আর একটি অভিনব বিষয় হল জোয়ারের সময় সমুদ্র তীরের অনেক কাছে চলে আসে আবার ভাটার সময় অনেক দূরে চলে যায়। সারা তত জুড়ে দেখতে পাওয়া যায় লাল কাঁকড়ার অবাধে ছুটোছুটি করে লুকোচুরি খেলা। সমুদ্রে সূর্যোদয় সাক্ষী থাকা এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। তাই হাতে ছুটি একদিন বেশি থাকলে একদিন থেকে যাওয়ায় ভালো।
দিঘা, মান্ডারমনি বা জুনপুটের মতো পর্যটন এর ঘেরাটোপ বগুরান কে গ্রাস করেনি এখনো। তাই অফবিট এ নিরিবিলি ছুটি কাটানোর সেরা ঠিকানা হল বগুরান। জুনুপুট সমুদ্রতীর, দরিয়াপুর, কপালকুণ্ডলা মন্দির কাছাকাছির মধ্যেই ঘুরে দেখে নেয়া যায়। এখান থেকে আপনি আশে পাশের সমুদ্রসৈকত গুলিও ঘুরে আসতে পারেন যেমন বাঁকিপুট, দিঘা, মান্ডারমনি, তাজপুর।
তবে এখানে রাত্রিবাসের একমাত্র ঠিকানা হলো হোটেল সাগর নিরালা। কারণ খুব বেশিদিন হয়নি বগুরান বাংলার ভ্রমণ মানচিত্রে স্থান করে নিয়েছে। শহুরে জীবন যেসমস্ত সুবিধায় অভ্যস্ত সেই সব রকম সুবিধা এবং তিনবেলার আহার নিয়ে রাত্রিবাসের খরচ মোটামুটি কমবেশি ১০০০ টাকা।
এই শীতে তবে উইকেন্ডে প্ল্যান করেই ফেলুন বগুরান জলপাই সমুদ্রসৈকত ভ্রমণ। রোদ্দুরে পিঠ পেতে বসে বালিতে আঙ্গুল দিয়ে বিলি কেটে কেটে, কিংবা লাল কাঁকড়ার দল কে গর্ত অবধি ধাওয়া করে, কিংবা আবার ভোরের আধো আলোয় প্রিয়জনের সাথে ঝিনুক কুড়িয়ে দারুন কাটবে ছুটির দিনগুলো।