রুকস্যাক
আমার চোখে দিল্লী – আগ্রা (পর্ব – ৩)
পর্ব ৩, মেহতাব বাগ
রীতা বসু : বাগ অর্থাৎ বাগিচা বা বাগান। সুন্দর কেয়ারি করা ফুলের গাছে সাজান এই মেহতাব বাগ। সন্ধ্যা আর প্রাতঃ ভ্রমনের উপযুক্ত স্থান। এটি তাজমহলের ঠিক পিছনে যমুনানদীর অপর পারে অবস্থিত। যদিও যমুনা নদীর সেই সৌন্দর্য্য আর নেই। ১৯৭৮ সালের বন্যায় পলি পরে যমুনা নদী ভরাট হয়ে গেছে, সেখানে আজ কাশ ফুলের বন। যমুনা নদীর সৌন্দর্য্য ফিরিয়ে আনতে তার সংস্কার প্রয়োজন কিন্তু তাতে যা যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা দরকার তাতে তাজমহলের ক্ষতির প্রভূত সম্ভাবনা।
সম্রাট সাজাহান স্থির করেছিলেন এই মেহতাব বাগে তিনি তাজের অনুরূপ একটি কালো পাথরের মহল বানাবেন।যাতে থাকবে তাঁর নিজের সমাধি। কিন্তু কালো পাথর কেনো?কেনো সাদা পাথর যা সম্রাটের অতি প্রিয়,যা তাঁর যে কোনো স্থাপত্যের মধ্যে বিরাজমান সেই সাদা পাথর নয় কেনো? ইতিহাস বলে সম্রাট সাজাহান সুপুরুষ ছিলেন না।মমতাজ বেগমের সৌন্দর্য্যের পাশে ছিলেন তিনি বেমানান তাই হয়তো সাদার পাশে তিনি কালোকেই স্থান দিতে চেয়েছিলেন।সম্রাটের সেই ইচ্ছা পূর্ন হয় নি। তার আগেই হতভাগ্য সম্রাট তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র আরঙজেবের হাতে বন্দী হন এবং বন্দী অবস্থাতেই তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন।
আমরা টিকিট কেটে মেহতাব বাগের ভিতর দিয়ে হেঁটে বাগের শেষ প্রান্তে যমুনার ধারে তাজমহলের পিছনে এসে দাঁড়ালাম। এখান থেকে দেখা যায় তাজমহলের পেভমেন্টের নীচে পরপর বাইশটা ঘরের দড়জা যা কোনোদিন খোলা হয় নি আর এখন খোলার প্রশ্নই ওঠে না কারন ঐ একটাই , তাজমহলের ক্ষতি হবে। অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন সম্রাট সাজাহান মমতাজ বেগমের দেহ মমী করে রেখেছিলেন তা ঐ বাইশটা ঘরের একটিতে আছে আবার অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন তাজমহল তৈরীর আগে ঐ স্থানে একটি শিব মন্দির ছিল এবং ঐ ঘরগুলি ছিল পুরহিতদের বাসস্থান। সে যাই হোক আমরা বিতর্কে যেতে চাই না।বেগম মমতাজের মমী যদি সত্যিই ঐ ঘরগুলির একটিতে থাকে তো তিনি থাকুন শান্তিতে অন্তিম শয়ানে।
আমাদের হাতে সময় কম তাই এখানে আর সময় নষ্ট না করে আমরা বেড়িয়ে এলাম। সূর্য্যের তেজ অতি প্রখর কিন্তু এখানে ঘাম হয় না তাই একটু স্বস্তি।বাগের বাইরে কয়েকটি ছোটো ছোটো দোকান আছে আমরা তার একটিতে বসে ঠান্ডা পানীয় সহযোগে একটু জিরিয়ে নিয়ে আগ্রা ফোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।
রুকস্যাক
ভ্রমণ : বাগুরানের বেলাভূমিতে।
দেবস্মিতা ঘোষ : বাতাসে শীতের আমেজ, সোনালী রোদের অকৃত্রিম স্নেহে আগলে নেওয়া স্বভাব, সুনীল আকাশ সবে মিলে প্রকৃতি যেন কোল পেতে বসে দুবাহু বাড়িয়ে অপেক্ষা করছে। আর আপনিও বুঝি নাগরিক ঘোড়দৌড়ে বিধ্বস্ত ????
বেশি নয়, ব্যস্ততার চোখরাঙানি থেকে এক কি দুই দিনের ছুটি বন্দোবস্ত করতে পারলেই মিলবে মুক্তির আস্বাদ। দিগন্তজোড়া নীলের মেলবন্ধন, চোখের পাতায় নেমে আসা বালির চড়, গর্জনরত সমুদ্রের ঢেউ এর মাঝে একান্তে অবসার কাটাতে পৌঁছে যান পূর্ব মেদিনীপুরের বগুড়ান জলপাই এর সমুদ্র তটে।
কলকাতার ধর্মতলা থেকে বাস ধরে বা হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেন এ কাঁথি পৌঁছে যান। কাঁথি থেকে টোটোতে ২৫০-৩০০ টাকার বিনিময়ে প্রায়ে ২৪ কিমি পথ অতিক্রম করে ঘন্টাখানেকের মধ্যেই পৌঁছে যান বগুড়ান জলপাই এর সমুদ্রতীরে। সমুদ্র এখানে শান্ত।
আর একটি অভিনব বিষয় হল জোয়ারের সময় সমুদ্র তীরের অনেক কাছে চলে আসে আবার ভাটার সময় অনেক দূরে চলে যায়। সারা তত জুড়ে দেখতে পাওয়া যায় লাল কাঁকড়ার অবাধে ছুটোছুটি করে লুকোচুরি খেলা। সমুদ্রে সূর্যোদয় সাক্ষী থাকা এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। তাই হাতে ছুটি একদিন বেশি থাকলে একদিন থেকে যাওয়ায় ভালো।
দিঘা, মান্ডারমনি বা জুনপুটের মতো পর্যটন এর ঘেরাটোপ বগুরান কে গ্রাস করেনি এখনো। তাই অফবিট এ নিরিবিলি ছুটি কাটানোর সেরা ঠিকানা হল বগুরান। জুনুপুট সমুদ্রতীর, দরিয়াপুর, কপালকুণ্ডলা মন্দির কাছাকাছির মধ্যেই ঘুরে দেখে নেয়া যায়। এখান থেকে আপনি আশে পাশের সমুদ্রসৈকত গুলিও ঘুরে আসতে পারেন যেমন বাঁকিপুট, দিঘা, মান্ডারমনি, তাজপুর।
তবে এখানে রাত্রিবাসের একমাত্র ঠিকানা হলো হোটেল সাগর নিরালা। কারণ খুব বেশিদিন হয়নি বগুরান বাংলার ভ্রমণ মানচিত্রে স্থান করে নিয়েছে। শহুরে জীবন যেসমস্ত সুবিধায় অভ্যস্ত সেই সব রকম সুবিধা এবং তিনবেলার আহার নিয়ে রাত্রিবাসের খরচ মোটামুটি কমবেশি ১০০০ টাকা।
এই শীতে তবে উইকেন্ডে প্ল্যান করেই ফেলুন বগুরান জলপাই সমুদ্রসৈকত ভ্রমণ। রোদ্দুরে পিঠ পেতে বসে বালিতে আঙ্গুল দিয়ে বিলি কেটে কেটে, কিংবা লাল কাঁকড়ার দল কে গর্ত অবধি ধাওয়া করে, কিংবা আবার ভোরের আধো আলোয় প্রিয়জনের সাথে ঝিনুক কুড়িয়ে দারুন কাটবে ছুটির দিনগুলো।