ক্রীড়া প্রাঙ্গণ
কিংবদন্তীর দ্বৈরথে রোনাল্ডোর জুভেন্টাসের বিরুদ্ধে একা লড়ে গেলেন মেসি।
সৌমেন্দু বাগ : ২০১৮ সালে মাদ্রিদ শহর ছাড়ার পর প্রথমবার ক্যাম্প ন্যু তে মুখোমুখি হলেন এই শতকের সবথেকে বড় দুই ফুটবল কিংবদন্তী লিওনেল মেসি এবং ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো। আর সেই লড়াইয়ে দুরন্ত লড়াই করেও লিওনেল মেসিকে থেকে যেতে হলো পরাজিত অর্ধে।
যদিও আগের ম্যাচেই দুই দলই নিজেদের দ্বিতীয় রাউন্ডে স্থান নিশ্চিত করে ফেলেছিল, আজকের ম্যাচ ফুটবল প্রেমীদের কাছে কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল না! সেখানেই কাতালুনিয়ানরা, ইতালিয়ান দের তিন পয়েন্ট উপহার দিয়ে গ্রূপে দ্বিতীয় হয়ে শেষ করল প্রথম রাউন্ড।
তবে ম্যাচের গুরুত্ব এখানে নয়। বার্সার দুর্গে মেসি- রনের মুখোমুখি লড়াইয়ে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমানের এই লড়াইয়ে মেসি হৃদয় জিতলেও শেষ হাসি হাসলেন রোনাল্ডো -ফ্যানেরাই।
খেলা শুরুর প্রথম মিনিট থেকেই বার্সেলোনার হতশ্রী ডিফেন্স চোখে পড়ছিল আর সেই সুযোগেরই সদ্ব্যবহার করেছিল জুভেন্টাস। প্রথম আক্রমণেই দানিলোর শট গোলপোস্টের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। আর চাপ বাড়তে থাকলে বার্সার তরুণ ডিফেন্ডার আরাউজো বক্সে রোনাল্ডোকে ফাউল করলে প্রথম পেনাল্টিতে বার্সার জাল কাঁপিয়ে দেন রোনাল্ডো আর সেইসঙ্গে খেলার উত্তেজনা। কিন্তু সেই উত্তেজনা দুদিকে বেশিক্ষন স্থায়ী হয়ে পারেনি।
সাত মিনিটের মধ্যে এরণ র্যামসের বাড়ানো বল পেয়ে যান একদম পারফেক্ট জায়গায় থাকা ইন- ফর্ম কোয়াডরাডো আর তিনি সেই বল বক্সে তুলে দিলে এক অসাধারণ আক্রোবাটিক ভলিতে বার্সার টেকাঠিতে বল জড়িয়ে দেন শালকে থেকে লোনে আসা ওয়েস্টন ম্যাককেনি।
দুগোলে এগিয়ে থাকার পর জুভেন্টাস আর আক্রমণে যাওয়ার কোনো চেষ্টা করেনি। তাঁরা জানতো অর্ধেক কাজ সম্পন্ন। এখন শুধু গ্রিজমান – মেসিকে আটকে যাও। সেকারণে প্ৰথমার্ধের শেষ দিকে কখনো ডান দিক কখনো বাঁদিক থেকে জুভেন্টাসের জাল খোঁজার চেষ্টা করলেও বক্সে লা-ডিজিট আর গোলে অভিজ্ঞ বুঁফর কাছে পরাস্ত হচ্ছিল মেসিবাহিনী।
দ্বিতীয়ার্ধে ব্রেথয়েটকে কে নামিয়ে আক্রমণের ধার বাড়ানোর চেষ্টা করলেও আজ বার্সার দিন ছিল না। কিছুক্ষনের মধ্যেই বার্সার বক্সে র্যামসেকে আটকাতে গিয়ে হ্যান্ড বল করে বসেন লেঙলেট। ফলস্বরূপ পেনাল্টি এবং রোনাল্ডোর গোলে তিন গোলে এগিয়ে যায় তুরিন পাড়ের দলটি।
খেলার ফলাফল প্রায় নির্ধারিত হয়ে গেলেও দর্শক অপেক্ষা করছিল একবার মেসি ম্যাজিকের। সেই সুযোগও বারবার তৈরি করেছিলেন তিনি। বক্সের মধ্যে বিপদ সৃষ্টি করলেও বুঁফ যেন ত্রাতা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন ম্যাচে। শেষ দিকে কর্নার থেকে জুভেন্টাস আরেকটা গোল করলেও অফসাইডের জন্য বাতিল হয়ে যায়। বার্সা ম্যানেজার রিকুই পুইগ্ কে নামিয়ে সুযোগ তৈরির চেষ্টা করলেও কাজের কাজ আর হলো না। তবে এটুকু মনে হলো পুইগ আর কুটিনহো প্রথম থেকে শুরু করলে বার্সার জেতার সম্ভাবনা বাড়তো।
তবে কোচ কোমানকে যা ভাবাবে তা হলো রক্ষণ। গত গ্রীষ্মে বায়ার্নের সামনে রক্ষণের ছন্নছাড়া অবস্থা দেখে নতুন ম্যানেজার সহ একগুচ্ছ তরুণ খেলোয়াড় নেওয়া হলো, তা সত্ত্বেও কোনো পরিবর্তন তো হলোই না। বরং এই রক্ষণ নিয়ে বায়ার্নের মতো হাই- প্রেসিং দলের সামনে আবার পড়লে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হতে সময় লাগবে না।
অন্যদিকে জুভেন্টাসেরও সেরা মরশুম কাটছে না। গতবারের চ্যাম্পিয়নরা সিরি এ তে চতুর্থ স্থানে। রোনাল্ডো নিয়মিত গোল পেলেও সেরকম উচ্চমানের খেলা চোখে পড়ছে না। বার্সার বিরুদ্ধে এগিয়ে যাওয়ার পর পুরো দলকেই রক্ষণে নামিয়ে এনেছিলেন পিরলো। রোনাল্ডো কেও আলাদা করে চোখে পড়লো না। অথচ তার প্রতিদ্বন্দ্বী একা সাতটি শট গোলে রেখেছেন, ১২৫ টি পাস খেলেছেন আর ১৯ টি মুখোমুখি লড়াইয়ে নেমেছেন।
খুব আশাপ্রদ না হলেও অবশ্যই উত্তেজক ছিল। বারবার মেসি- ম্যাজিকের স্পর্শ আর ক্যাম্প নিউ তে রোনাল্ডোর ‘সিইইই’ সেলিব্রেশন – ফুটবলপ্রেমীদের কাছে এই যথেষ্ট নয় কি?
ক্রীড়া প্রাঙ্গণ
মেলবোর্নে দ্বিতীয় টেস্টে দুরন্ত জয় রাহানের নেতৃত্বাধীন ভারতের।
বিক্রম দাঁ : অ্যাডিলেড টেস্ট ম্যাচে ৩৬ রানে অল আউট হয়ে লজ্জার রেকর্ড গড়েছিল ভারতীয় দল। মেলবোর্নে বক্সিং ডে টেস্টে ছিলেন না প্রথম দলের চার তারকা। আর মেলবোর্নে ভারতের রেকর্ডও খুব একটা সুখকর ছিল না। কিন্তু এ হেন প্রতিকূলতার মধ্যেই অজিঙ্কে রাহানের ভারত দেখিয়ে দিয়েছে, এভাবেও ফিরে আসা যায়।
বক্সিং ডে টেস্টে সিরিজে সমতা ফিরিয়ে যেন রূপকথার কাহিনি লিখে ফেলেছে টিম ইন্ডিয়া। তাই এই টেস্ট জয়ের স্বর্ণ পদক তার এই প্রাপ্য। অনবদ্য ঠান্ডা মাথার অধিনায়কত্ব হোক, কিংবা ব্যাট হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া, দ্বিতীয় টেস্টে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন আজিংকে রাহানে । তাই এদিন টুইট করে ক্যাপ্টেন বিরাট কোহলিও রানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
ম্যাচের আগে বিরাট বা সামির অনুপস্থিতি হোক বা খেলা চলাকালীন উমেশ যাদব এর ছোট হাওয়ার পরেও বোলিং ম্যানেজমেন্ট হোক সব দিকেই দারুন প্রতিভার পরিচয় দিয়েছে জিংকস। তবে এই ম্যাচ জেতার পর অধিনায়ক দলের ডেবিউ টান্টস সিরাজ আর শুভমণ এর অসাধারণ পারফরমেন্স এর কথা বলেছেন। আর বলবেননাই বা কেনো? ইশান্ত শর্মা ছিলেন না টেস্ট এ সেই জন্য তৃতীয় সিম বোলার হিসেবে যাদব সুযোগ পায়। তাতেই ভারতীয় দলের বোলিং ডিপার্টমেন্টকে দুর্বল বলেছিলেন অনেক ক্রিকেটর।
সমি দল থেকে বেরিয়ে গেলে সেখানে সিরাজ এর নতুন ও পুরনো বলে উইকেট নেওয়া র দক্ষতাই দারুন কাজে এসেছে ভারতের। এর পর গিল , আসন্ন দশ বছরে ব্যাটিং এ যে গিল এর রাজত্ব চলতে পারে এমনটা অনেক ক্রিকেটার বলছেন। যেমন টেকনিক তেমন শর্ট সিলেকশন । ভারতীয় ব্যাটিং এর ভবিষ্যত যে বেশ উজ্জ্বল তা বেশ পরিস্কার।
কোহলির নেতৃত্বেই প্রথম ম্যাচে লজ্জার সেই রেকর্ডটি করতে হয়েছে ভারতকে। তারপর আবার পিতৃত্বকালীন ছুটিতে দেশে ফিরে এসেছেন বিরাট। মেলবোর্ন টেস্টের আগে দল ছিল ছত্রভঙ্গ। ৪-০ তে হারের আশঙ্কা তাড়া করে বেড়াচ্ছিল দলকে। সেই আশঙ্কাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে মেলবোর্নে জয়ের শিরোপা উঠেছে ভারতের মাথায়। ক্যাপ্টেন কোহলি তাই বলছেন,”কী অসাধারণ জয়! গোটা দলের পারফরম্যান্স অনবদ্য। ছেলেদের জন্য অত্যন্ত খুশি। বিশেষ করে রাহানের জন্য। এর চেয়ে খুশির খবর হতে পারে না। এরপর আমাদের শুধু উপরের দিকে ওঠার পালা।