কলমের আঁচড়ে
“আমার আর রাখাল সাজা হলো না…”
সৌমেন্দু বাগ : প্রিয়তমা,২০০৬। মাঝরাত। ক্লাবঘর থেকে ভেসে আসছে হালকা গুঞ্জন।আর মাঝে মাঝে ভীষণ হইহল্লা। বছর ছয়েকের ছেলেটা বোঝেনা কিচ্ছু। শুধুমাত্র হুজুগে বাবার হাত ধরে চলে এসেছে টিভিতে ফুটবল দেখতে।তারপর একদিন গ্রামের মাঠে খুব হইচই। ফুটবল খেলা হচ্ছে। চোখের সামনে ফুটবল! দেখতেই হবে।সেই বাবার আঙ্গুল ধরে মাঠে। অবাক হয়ে সেই অভিজ্ঞতার সাক্ষী থাকলো সে। দুদল লোকের রঙিন জামা পরে একটা বল কে জালে জড়ানোর চেষ্টা দেখে নয়। তাই দেখে মাঠের বাইরের লোকজনের পাগলামো দেখে। খেলা সম্বন্ধে বেশি কিছু বোঝেনা তখনও সে। কিন্তু এটুকু বুঝতে পেরেছিল এই পায়ে মারা বলের খেলায় এমন কিছু নেশা আছে, যার জন্য পাগল হতে পারা যায়।
বড় হতে থাকে সে। বাড়িতে আসা কাগজ, খবরের চ্যানেল, সন্ধেবেলায় বাবা কাকাদের আড্ডা তার মধ্যে বীজ পুড়ে দিতে থাকে ভালোবাসার, খেলার প্রতি, ফুটবলের প্রতি, আর নিজের অজান্তেই তোমার প্রতি। সে কোনো ইতিহাস জানতো না, ফুটবল বুঝতো না, শুধুমাত্র কোনো অদৃশ্য জাদুবলে সে ভালোবেসে ফেললো তোমায়।সে জানে না কলকাতা কোন দিকে, স্টেডিয়াম কেমন দেখতে। সে শুধু জানে প্রতিদিন কাগজের শেষ পাতায় তোমার খবর থাকে,সযত্নে ব্যারেটো থেকে বাইচুঙ্গের ছবি কাটতে হবে আর জানে একদিন ওই টিভিতে বলে যুবভারতী না কি যেন, সেখানে গিয়ে বড় ম্যাচ দেখবো, একটা সবুজ মেরুন জার্সি কিনবো। পিন্টুকা ছিল তোমার আরেক পাগল প্রেমিক। সে নাকি একবার কলকাতা গিয়েছিল, সে চেনে; নিয়ে যাবে বলেছে আরেকটু বড় হলে।
কোলকাতার চাকচিক্য, জাঁকজমক, আবেগের স্পর্শ থেকে বহুদূরের একটা গ্রাম,যার নাম ম্যাপে পাওয়া যায় না। প্রয়োজন ছাড়া কলকাতার নাম নেয় না কেউ!অদ্ভুতভাবে সেই শহরেরই দলের সাথে হৃদয় জড়িয়ে ফেললো ছেলেটা। তখন খবরের চ্যানেলে খেলা হতো। বাবা-দাদাদের সাথে তোমার তাঁবুতে ফেড কাপ আসা দেখা। সুরকুমার, জেমস , শিল্টন দের প্রতি ভালোবাসা আরো কয়েকগুন বেড়ে গেল। করিম স্যার তখন গুরুদেব। আর মোহনবাগান ‘আমার’ দল। সে জানতে পারলো তুমি নাকি সেই ১৯১১ সালে ইংরেজ দল কে হারিয়ে প্রথমবার আই এফ এ শিল্ড বাংলার ঘরে তুলেছিল। গর্বে ছোট্ট বুকের খাঁচা বিশাল হয়ে গেল। তার প্রেমিকা ইতিহাস তৈরী করেছে। স্বপ্নের জেদ তখন আরো বেড়েছে। পিন্টুকা একটা সবুজ মেরুন পতাকা কিনে এনেছে কোথা থেকে। প্রতিদিন সে সেটাকে চুমু খেতে যায়।
প্রাইমারি পেরিয়ে হাইস্কুল। গ্রাম পেরিয়ে মফসসল। কলকাতার দূরত্ব কিছুটা হয়তো কমেছে, কিন্তু কমেনি সবুজ মেরুন ভালোবাসা। প্রিয়জনকে হারানোর অভিজ্ঞতা তার নেই। কিন্তু ব্যারেটোর বিদায়ে যেন বুকের একটা পাঁজর খসে গেল। কিন্তু এ দুঃখ বলবে কাকে! ফুটবলকে ভালোবাসতে শেখানো বাবা বলে পড়াশোনায় মন দিতে, বন্ধুরা বলে ইপিএল, লা লিগার কথা। হ্যাঁ, বিদেশি ফুটবল সেও ভালবাসে, কিন্তু কোথাও যেন হৃদয়ের সবুজ মেরুন রক্তের শিরাটা ক্ষয়ে যাচ্ছে আসতে আসতে। উৎসব করে নিয়ে আসা ওদাফার ব্যর্থতা, একের পর এক হার। অন্যদিকে পড়শী দলের রমরমা বাজার। চরম উদাসীনতার মাঝেও স্বপ্ন তখনও ওড়ে সবুজ মেরুন পতাকার মতো, বড় হলে কলকাতা যাব, যেদিন যাবো তোমার উপহার দেবো আই লীগ ।
ঠিক যেমন অসহায় মানুষ কোনো আশা না দেখে আশ্রয় নেয় নেশার। ISL সেরকমই এক নেশার মতো এলো জীবনে। চকমকি পাথরে নজর তো লাগবেই।বিদেশি ফুটবলে বুঁদ বন্ধুদের দল তারপর আবার প্রথম বছরেই ATK এর জয়। নেশার ডোজ অতিরিক্ত পরে গেল কিশোরদের মনে। লাল সাদা একটা জার্সি কিনে ফাটাফাটি ফুটবল গাইলেও ফুটবল বিধাতা যেন নিঃশব্দে হাসছিলেন। হঠাৎই এক তারা খসার মতো ময়দানে আলোর ফুলকি নিয়ে এলেন নর্ডি, সোনি নর্ডি। দুর্দান্ত একটা মরশুম।সেই শিশু বয়স থেকে দেখা স্বপ্নের অর্ধেক পূরণ-আই লীগ ঢুকলো ক্লাবে। অনেক দিন পর প্রাণ খোলা বাতাসে তরতর করে এগোচ্ছে তোমার তরী।আনন্দে আত্মহারা পিন্টুকা, “ইস , এবারেরটা যেতে পারলাম না রে, পরের বার তো তোর মাধ্যমিক শেষ।, তখন যাবই , হ্যাঁ।”
হ্যাঁ , তারপর মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক পেরিয়ে কলেজ পৌঁছেছে। বাগানে আবার খরা। পিন্টুকারও খোঁজ পাওয়া যায় না আজকাল। লা লিগা, ইপিএল ঠোঁটের ডগায়, কিন্তু বুকের মধ্যে তখনো ভাটিয়ালি গায় সবুজ মেরুন পালের নৌকা। কলকাতা তখনও ছুঁতে পারেনি সে কিন্তু ছুঁয়েছে তোমার বাগানে আসা স্প্যানিশ বসন্ত। মাঠে,মাঠের বাইরে। ইতিহাসের ভার বয়ে চলা, ছোট থেকে নামের সাথে ভালোবাসা মিশে যাওয়া ক্লাবের প্রতিটা ম্যাচ এখন নজরে। খবরের কাগজ পেরিয়ে স্মার্টফোন এসেছে, ফুটবল বোঝার ক্ষমতা বেড়েছে, আর বেড়েছে সেই বাকি অর্ধেক স্বপ্ন পূরণের তাগিদ। কিন্তু পূরণ কবে হবে সে জানে না , পিন্টুকাকেও আর বলে না। বুঝতে পারে পিন্টুকা কেন নিয়ে যায়নি এতদিন। মধ্যবিত্ত জীবনে ওই স্বপ্ন টুকুই যে বাঁচিয়ে রাখে… এটা বুঝতে পেরে এখন সে হাসে। সে হেসে বেইটিয়ার ফ্রি কিক দেখে, গঞ্জালেস বলটা মাঝমাঠ থেকে কাটিয়ে পাপার দিকে বাড়িয়ে দিলে ওই যুবভারতীর প্রত্যেকটা দর্শকের মতো সেও লাফিয়ে উঠে। ভারসাম্যহীনতা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ভারতসেরা।
প্রত্যন্ত গ্রামের এক নামহীন নদীর জল মহান গঙ্গার ছোঁয়া পেয়ে পবিত্র হতে চায়, সে বয়ে চলে তাঁর সাথে মিলিত হওয়ার জন্য। জানে না সে কোনোদিন পারবে কিনা, কিন্তু ওই যে আকাঙ্খা যার জন্য তৈরি করে ফেলে নিজের গতিপথ, তাকে তো অস্বীকার করা যায় না। সেরকমই সুদূর গ্রামের কাঁচা রাস্তা ধরে যে শুরু করেছিল পথ চলা একবার, জীবনে একবার তোমার ঐ সবুজ মেরুন পতাকা আকড়ে ধরে এক লাখ মানুষের সাথে চিৎকার করবো তোমার নাম ধরে – এই স্বপ্ন নিয়ে, তাকেই বা কি করে দূরে ফেলে দিতে পারো তুমি?[ আরও পড়ুন – শেষ দু’মাসে আফ্রিকাতে এক সঙ্গে প্রায় ৩৫০ টি হাতির চাঞ্চল্যকর ও রহস্য জনক মৃত্যু…! ]অর্থ নেই, আবেগ আছে। সুবিধা নেই, জেদ আছে। অপরিসীম জেদ, এই জেদ খালি পায়ে স্পাইকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তৈরি হওয়া জেদ, ট্রফিহীন সময়ে প্রত্যাশা আঁকড়ে তৈরি হওয়া জেদ,খারাপ উচ্চমাধ্যমিকের পর আবার লড়াই করার জেদ। এই জেদ বিশ্বাস করতে শেখাত নিজেকে,অসম্ভব কে সম্ভব করার; তোমাকে ছোঁয়ার…
এরপর ময়দানে সবুজ মেরুন পতাকা হয়তো উড়বে, সবুজ মেরুন জার্সিতে দাপিয়ে বেড়াবে বিশ্বসেরারা। সেই সুদূর গ্রামেও এখন সুলভে পৌঁছে যাবে তোমার রূপ।কিন্তু সেই রূপে তুমি কতটা থাকবে? ২০%? ৩০%? সংখ্যা দিয়ে প্রেম মাপা যায়? সেই সংখ্যার পিশাচের সামনে তুমি কি আর থাকবে? থাকবে কি সেই বাচ্চা ছেলেটির স্বপ্ন? ইতি- তোমার এক অসহায় প্রেমিক।
কলমের আঁচড়ে
পৃথিবীর বুকে মেনে চলা কিছু বিস্ময়কর এবং ভয়ঙ্কর সত্কার-রীতি!
বিশ্বজিৎ দাস : কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত বলে গেছেন “জন্মিলে মরিতে হবে অমর কে কোথা কবে?” অর্থাৎ জন্মগ্রহণ করলে আমাদের মৃত্যু অনিবার্য। মানুষের মৃত্যুর পর সৎকার করা হয়। সভ্যতার প্রথম দিক থেকেই এই নিয়ম চলে আসছে। এই সৎকারের সময় টা খুবই কঠিন, বিশেষত নিকটজনের কাছে। সে সব আঁকড়ে থাকে, কারণ একবার ছেড়ে দিলে আর পাওয়া যাবে না। এই ভাবাবেগ থেকেই স্মৃতি রক্ষার ভাবনা শুরু। মৃতের ব্যবহৃত জিনিস রেখে দেওয়া, যেমন চুল কিছুটা কেটে যত্ন করে রেখে দেওয়া ছিল পুরনো প্রথা। অনেকে দাঁত সংরক্ষন করত। বুদ্ধের দাঁত কলকাতার জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে আজও।
কিন্তু পৃথিবীর প্রত্যেক জাতির মধ্যেই মৃত্যুর পর কিছু বিশেষ নিয়ম পালন করার রীতি আছে। কিছু নিয়ম বিজ্ঞানসম্মত আবার কিছু একেবারে অদ্ভুত। মৃতদেহ সত্কারের জন্য কেউ যেখানে মৃতদেহটি পুড়িয়ে ফেলেন, আবার কেউ বা মাটিতে কবর দেন। আবার কেউ বা সযত্নে সেটিকে কফিনজাত করেন। কিন্তু এসবের বাইরেও এমন অনেক রীতিনীতি আছে যেগুলি আমার আপনার স্বাভাবিক ভাবনা চিন্তার বাইরে।
সাধারণ মানুষের কাছে মৃত ব্যক্তিকে মাটিতে কবর দিয়ে রাখা বা আগ্নিদাহ করা পরিবেশগত কারণে মোটামুটি স্বাভাবিক মনে হলেও কিছু কিছু সংস্কৃতিতে মৃত ব্যক্তি সমাহিত করার পদ্ধতি অবাক করার মতো।
পৃথিবী জুড়ে চলা এই আশ্চর্য ও কিছুটা ভয়ঙ্কর মৃত্যু অনুষ্ঠান গুলি হল :
১. মমিফিকেশন :
এই ঘটনা আমার আপনার কিছুটা জানা। প্রাচীন মিশরের ফারাওদের মরদেহ মমি করে সমাহিত করা হতো। এই পদ্ধতিতে প্রথমে দেহের অভ্যন্তরীণ সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বের করা হয়। এরপরে দেহের সব আর্দ্রতা অপসারিত করা হয়। শেষে লম্বা আকৃতির লিনেন কাপড় দিয়ে দেহ মুড়ে ফেলা হয়।
তবে আধুনিক মমিফিকেশন পদ্ধতি আলাদা।বর্তমানে মৃতদেহ সংরক্ষণের জন্য কিছু রাসায়নিক তরল ভর্তি পাত্রে দেহ ডুবিয়ে রাখা হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এটি মৃতদেহ সৎকারের কোনো রীতি নয়; এটি মৃতদেহ সংরক্ষণ পদ্ধতি।
২. মৃতের পুনর্জাগরণ :
এই অদ্ভুত প্রথাটি পালন করা হয় মাদাগাস্কায়। প্রতি পাঁচ থেকে সাত বছর পর পর। তার নিকটাত্মীয়রা কবর খুঁড়ে মৃত ব্যক্তির দেহাবশেষ বের করে আনে। এরপর মৃত ব্যক্তিকে নতুন পোশাক পরানো হয় এবং পারিবারিক ভোজে তাকে বসিয়ে রাখা হয়।এদিন মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে গানের তালে তালে নাচতেও দেখা যায়। পারিবারিক পুনর্মিলন হিসেবে প্রথাটিকে দেখা হয়।
৩. এন্ডোক্যানিবালিজম (Endocannibalism) :
এই বিশেষ মৃত্যু অনুষ্ঠানটি দেখতে পাওয়া যায় আমাজন রেইন ফরেস্টের ইয়ানোমমি উপজাতি, পাপুয়া নিউ গিনির মেলানসিয়ানস উপজাতি এবং ব্রাজিলের ওয়ারীরা উপজাতির মধ্যে।এখানে একটি মৃতদেহকে বা দেহাংশকে ভক্ষণ করা হয়। তাদের বিশ্বাস এই প্রথার মধ্যে দিয়ে মৃত ব্যাক্তির আত্মা স্বর্গে যাবে।
এই জাতির মানুষেরা বিশ্বাস করেন, মৃত্যু কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়। উপরন্তু তারা ভাবেন যে, তাদের প্রতিদ্বন্দী গোষ্ঠী কোনো অশুভ আত্মাকে প্রেরণ করেছে। সেই কারণে এই ঘটনা রোধ করার জন্য তারা এই অনুষ্ঠানটি করে থাকেন। যাতে মৃত ব্যাক্তির আত্মা জীবিত থাকে এবং তার পরবর্তী প্রজন্মকে রক্ষা করতে পারে।
এই অনুষ্ঠানটি করার জন্য প্রথমে তারা মৃতদেহটিকে পাতা দিয়ে মুড়ে বাড়ি (যেখানে তিনি মারা গেছেন) থেকে অল্প দূরে জঙ্গলে রেখে আসেন। এর পর মোটামুটি ৩০ থেকে ৪৫ দিনের মাথায় সেই পঁচাগলে যাওয়া মৃতদেহ থেকে হাড় সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। এরপর কলা দিয়ে বানানো একধরণের সুপের মধ্যে মৃতদেহের ছাই মিশিয়ে গোষ্ঠীর সকলে সেটি পান করে। তবে এই নিয়ম শুধুমাত্র গোষ্ঠীর শিশু ও মহিলারা পালন করেন।
৪. তিব্বত বৌদ্ধ মহিমা কবর/ তিব্বতের আকাশ সৎকার (Tibetan Buddhist Celestial Burials or Sky burial) :
এই সৎকার অনুষ্ঠানটি তিব্বতি ঐতিহ্যের প্রতীক। এই অনুষ্ঠানে মৃতদেহকে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে পাহাড়ের মাথায় রেখে আসা হয় এবং পাখিদের (বিশেষত শিকারী পাখিদের) ওই দেহাংশ ভক্ষণ করতে দেওয়া হয়। অনেক সময় অক্ষত মৃতদেহও রেখে দেওয়া হয় এই পাখিদের খাদ্য হওয়ার জন্য।
বৌদ্ধ ধর্ম অনুসারে মৃতদেহকে খালি জাহাজ মনে করা হয় যা সংরক্ষনের কোনো দরকার নেই।মূলত, তিব্বতের কঠিন জলবায়ু ও পাথরে ভরা জমিতে কবর দেওয়া এক পক্ষে অসম্ভব।৫. সাসপেন্ড কবরস্থান (Suspended Burials) : এই সৎকার অনুষ্ঠানটি প্রাচীন চীন বংশের মধ্যে দেখা যায়। এখানে তারা মৃতদেহকে কফিনে পুড়ে উঁচু পাহাড়ের গায়ে অবস্থিত শিলার উপর ঝুলিয়ে রেখে দেয়। সাধারণের বিশ্বাস, মৃতদেহকে আকাশের কাছাকাছি রাখা উচিত যাতে তারা বন্য প্রাণীদের নাগালের বাইরে এবং ভগবানের নাগালের মধ্যে বা কাছাকাছি থাকতে পারে।
৫. সতী :
উপযুক্ত কারণেই হিন্দু ধর্মে সতীদাহ প্রথার প্রচলন বর্তমানে নিষিদ্ধ। তবুও একটা সময়ে এই নিষ্ঠুর ও অমানবিক সৎকার হিন্দু ধর্মের এক সনাতনী ঐতিহ্য হিসাবেই মানা হত। এই রীতি অনুযায়ী, মৃত ব্যাক্তির স্ত্রী কে বধূবেশে সাজিয়ে একই চিতায় মৃত্যু বরণ করতে হত। সেই সময় দাবি করা হত, সতীদাহ প্রথার মাধ্যমে মৃত স্ত্রী সতিরূপে স্বর্গলাভ করবে।
৬. ভাইকিং ফিউনারেল (The Viking Funeral) :
এটি একটি অন্যতম নৃশংস সৎকার অনুষ্ঠান। এই রীতি অনুযায়ী মৃতদেহকে একটি অস্থায়ী কবরে দশ দিনের জন্য রাখা হত। পাশাপাশি চলত মৃতের জন্য নতুন জামাকাপড় তৈরির কাজ। অন্যদিকে একজন ক্রীতদাসীকে বেছে নেওয়া হত, যে ওই মৃত মানুষটির পরবর্তী জীবনের সঙ্গিনী হবে। এরপর সেই মেয়েটি ওই গ্রামের সকলের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতো। তাদের মতে এই বর্বরতায় নাকি ছিল মৃতব্যাক্তির প্রতি প্রেম নিবেদন। তারপর ওই দাসীর গলায় ফাঁস দিয়ে এবং সবশেষে ছুরি মেরে হত্যা করা হতো।
এরপর একটি কাঠের জাহাজে মৃত ব্যাক্তির সাথে তাকেও রেখে দিয়ে অগ্নি সংযোগ করা হত।
৭. আঙুলের আবৃততা (Ritual Finger Amputation) :
এই মৃতদেহ সৎকারের নিয়মটি পাপুয়া নিউ গিনির দানি জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রচলিত।
এই নিয়ম অনুযায়ী বাড়ির কোনো প্রিয় ব্যক্তি মারা গেলে তার সঙ্গে সম্বন্ধিত মহিলা ও শিশুরা তাদের আঙুলের কিছু অংশ কেটে ফেলত। এরপর কাদা ও ছাই মুখে মেখে মৃতব্যক্তির জন্য শোক প্রকাশ করত।
৮. টোটেম পোলস (Mortuary Totem Poles) :
স্থানীয় সভ্যতার বিভিন্ন গল্প তুলে ধরার জন্য টোটেম পোল তৈরি করা হয়। হায়দা উপজাতির মধ্যে এই রীতি দেখতে পাওয়া যায়। এই রীতি অনুযায়ী মৃতব্যাক্তির শরীরকে পেটানো হবে যতক্ষন না এটি একটি ছোট বাক্সে এঁটে যায়।এরপর এই বাক্সটি একটি টোটেম পোল এর উপর রেখে মৃত ব্যাক্তির বাড়ির সামনে রেখে আসা হয়।
৯. বারিড ইন ফ্যান্টাসি কফিন (Buried in a fantasy Coffin) :
এই রীতি অনুযায়ী মৃতদেহকে এমন একটি কফিনে রাখা হয় যেটি তার জীবনকে অথবা পেশাকে উপস্থাপনা করে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো বিমান চালক কে বিমানরূপী কফিনে, কোনো জেলেকে মাছরূপী কফিনে আবার কোনো ধনী ব্যাবসায়ীকে একটি দামি গাড়ীরূপী কফিনে রাখা হয়।
১০. অন্ধ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া (Blindfolded funeral) :
এই মৃতদেহ সৎকারের রীতি অনুযায়ী মৃতদেহের চোখ বেঁধে তাকে বাড়ির মুখ্য দরজার সামনে রেখে দেওয়া হয়। এটি দেখা যায় উত্তর পশ্চিম ফিলিপিনেসে।
এছাড়াও সারা পৃথিবী জুড়ে আরও নানান ধরনের অদ্ভুত এবং ভয়ংকর সৎকার অনুষ্ঠান দেখতে পাওয়া যায়।