ক্রীড়া প্রাঙ্গণ
শতকের সর্বনিম্ন স্কোর। এডিলেড থেকে কি শিখলো ভারতীয় দল?
নিজস্ব প্রতিনিধি : ৮ উইকেটে হার। শুধু কি এটুকুই যথেষ্ট অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট ম্যাচ কে বর্ণনা করতে! মনে হয় না। আড়াই দিনে শেষ হওয়া ম্যাচের স্টিয়ারিং শুরুতে ভারতের হাতে থাকলেও একদিনের মধ্যেই নিজের দিকে ম্যাচ ঘুরিয়ে নিলো অজি বাহিনী।
কি এমন ছিল তৃতীয় দিনে? কামিন্স – হেজেলউড কে খেলা কি এতটাই অসম্ভব ছিল? না কোহলি বাহিনীর আরো ভালো ভাবে ব্যাট করা সম্ভব ছিল?
সম্ভবত দুটোই। জস্প্রীত বুমরাহ এর ফিরে যাওয়ার পর চেতেশ্বর পূজারা এবং মায়াঙ্ক আগারওয়াল যে বল দুটিতে ফিরে গেলেন তাতে দশ জন ব্যাটসম্যানের মধ্যে নয়জনই আউট হতেন কিন্তু কোহলি, রাহানে কিংবা ঋদ্ধিমান( দুটো ইনিংসে) যেভাবে উইকেট ছুড়ে এলেন, তাতে অবাক হওয়ারই কথা।
১.
আইপিএল- এফেক্ট। ডিফেন্সিভ মানসিকতার অভাব: পৃথ্বী শ। কয়েক বছর আগেও ভারতীয় ক্রিকেটের উদীয়মান তারকা হিসেবে জ্বলজ্বল করছিলেন তিনি। আজ কি এমন হলো? ভারতের হয়ে টেস্টে কিছু সাফল্য পাওয়ার পর আইপিএলে দলের ওপেনিং এর দায়িত্ব পড়লো কাঁধে। দ্রুতগতিতে রান তোলার খেলায় প্রথমদিকে সাফল্য পেলেও নিজের স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট করে আর কদিনই বা টিকে থাকতে পারবেন। ফলত টেস্টে এসেও নিজের ছন্দ খুঁজে পাচ্ছেন না। পরের টেস্টে হয়তো বসবেন, শুবমান গিল আসবেন। তিনিও আরেক তারকা। তার কাঁধেও ছিল একটা দলের ওপেনিং করার দায়িত্ব। যদিও তিনি সেই দলের হয়ে খেলাতে নিজের স্বাভাবিক ছন্দ টি নষ্ট করেননি বলে আশা দেখা যেতে পারে।
২.
উইকেটকিপার- ওয়াকিং উইকেট : ধোনি পরবর্তী সময়ে তার অভাব স্পষ্ট হবে জানা ছিল। কিন্তু এতটা?( যদিও ধোনির টেস্ট থেকে বিদায় নেওয়া ছবছর হতে চলল)। ঋদ্ধি নিঃসন্দেহে অসাধারণ কিপার। অনেক সুযোগ ও পেয়েছেন। কিন্তু দু একটি ম্যাচ ছাড়া প্রায় প্রত্যেক ম্যাচে উইকেট ছুড়ে দিয়ে এসেছেন। লোয়ার মিডল অর্ডারে পূর্বে ধোনি যে ভরসা টুকু দিতেন সেরকম ভরসা দেওয়ার মতো কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না।
৩.
ব্যর্থ লোয়ার মিডল অর্ডার: ধোনির বিদায় এবং ভারতের বোলিং লাইন আপ শক্তিশালী হওয়া এই দুইয়ের ফলে ভারতের লোয়ার মিডল অর্ডার ব্যর্থ হয়ে পড়েছে। আর এই টেস্ট এই ব্যর্থতা কে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। উপমহাদেশীয় অঞ্চলে লোয়ার মিডল অর্ডার সেরকম গুরুত্বপূর্ণ অবদান না রাখলেও বিদেশ সফর এই অর্ডারের গুরুত্ব অপরিসীম। এই বছরের শুরুতে হ্যামিল্টনে প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেটে ১৩২ থেকে ১৬৫ তে শেষ, ক্রাইস্টচার্চের প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেটে ১৯৭ থেকে ২৪২ এ শেষ – যা বারবার বোঝাতে চাইছিল, আজ ভালোভাবেই বুঝিয়ে দিলো। বুমরাহ, শামী, অশ্বিন, উমেশ সবাই একা হাতে বোলিংয়ে ম্যাচ জিতিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে মানছি, কিন্তু এই শতকের শুরুর দিকেই যেখানে কুম্বলে, আগারকার, হরভজন এমনকি ইশান্ত ব্যাট হাতে একটা সেশন কাটিয়ে ফেলার ক্ষমতা রাখতেন, আজ সেরকম পারফরম্যান্স কোথায়?
৪.
লেজটুকু কাটতেই যত দেরি : একে তো ভারতের লোয়ার মিডল অর্ডারে রান ওঠে না। আবার শক্তিশালী বোলিং লাইন নিয়ে বিপক্ষের টপ অর্ডারকে গুঁড়িয়ে ফেললেও লোয়ার অর্ডার কে পরিষ্কার করতে একটা সেশন লেগে যাচ্ছে। এই ম্যাচেই প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার ১১১ রানে সপ্তম উইকেট ফেললেও শেষ তিনটে উইকেট ফেলতে আরো আশি রান যোগ হয়ে গেল।এই সমস্যা টাও নতুন নয়। ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ডের শেষ তিনটে উইকেটে ১২৩ রান উঠেছিল। আবার ক্রাইস্টচার্চে ও সাত উইকেটে ১৫৩ থেকে ২৩৫। ভেনু বদলে যাচ্ছে কিন্তু গল্প বদলাচ্ছে না।
এছাড়াও গোটা সফরে হতাশাজনক ফিল্ডিং, কোহলির চলে যাওয়া, শামীর চোট এতসব ইস্যু একসাথে ভাবাচ্ছে গোটা দলকে। আশু সমাধান দরকার নইলে সিরিজ হাতছাড়া হওয়া সময়ের অপেক্ষা।
ক্রীড়া প্রাঙ্গণ
মেলবোর্নে দ্বিতীয় টেস্টে দুরন্ত জয় রাহানের নেতৃত্বাধীন ভারতের।
বিক্রম দাঁ : অ্যাডিলেড টেস্ট ম্যাচে ৩৬ রানে অল আউট হয়ে লজ্জার রেকর্ড গড়েছিল ভারতীয় দল। মেলবোর্নে বক্সিং ডে টেস্টে ছিলেন না প্রথম দলের চার তারকা। আর মেলবোর্নে ভারতের রেকর্ডও খুব একটা সুখকর ছিল না। কিন্তু এ হেন প্রতিকূলতার মধ্যেই অজিঙ্কে রাহানের ভারত দেখিয়ে দিয়েছে, এভাবেও ফিরে আসা যায়।
বক্সিং ডে টেস্টে সিরিজে সমতা ফিরিয়ে যেন রূপকথার কাহিনি লিখে ফেলেছে টিম ইন্ডিয়া। তাই এই টেস্ট জয়ের স্বর্ণ পদক তার এই প্রাপ্য। অনবদ্য ঠান্ডা মাথার অধিনায়কত্ব হোক, কিংবা ব্যাট হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া, দ্বিতীয় টেস্টে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন আজিংকে রাহানে । তাই এদিন টুইট করে ক্যাপ্টেন বিরাট কোহলিও রানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
ম্যাচের আগে বিরাট বা সামির অনুপস্থিতি হোক বা খেলা চলাকালীন উমেশ যাদব এর ছোট হাওয়ার পরেও বোলিং ম্যানেজমেন্ট হোক সব দিকেই দারুন প্রতিভার পরিচয় দিয়েছে জিংকস। তবে এই ম্যাচ জেতার পর অধিনায়ক দলের ডেবিউ টান্টস সিরাজ আর শুভমণ এর অসাধারণ পারফরমেন্স এর কথা বলেছেন। আর বলবেননাই বা কেনো? ইশান্ত শর্মা ছিলেন না টেস্ট এ সেই জন্য তৃতীয় সিম বোলার হিসেবে যাদব সুযোগ পায়। তাতেই ভারতীয় দলের বোলিং ডিপার্টমেন্টকে দুর্বল বলেছিলেন অনেক ক্রিকেটর।
সমি দল থেকে বেরিয়ে গেলে সেখানে সিরাজ এর নতুন ও পুরনো বলে উইকেট নেওয়া র দক্ষতাই দারুন কাজে এসেছে ভারতের। এর পর গিল , আসন্ন দশ বছরে ব্যাটিং এ যে গিল এর রাজত্ব চলতে পারে এমনটা অনেক ক্রিকেটার বলছেন। যেমন টেকনিক তেমন শর্ট সিলেকশন । ভারতীয় ব্যাটিং এর ভবিষ্যত যে বেশ উজ্জ্বল তা বেশ পরিস্কার।
কোহলির নেতৃত্বেই প্রথম ম্যাচে লজ্জার সেই রেকর্ডটি করতে হয়েছে ভারতকে। তারপর আবার পিতৃত্বকালীন ছুটিতে দেশে ফিরে এসেছেন বিরাট। মেলবোর্ন টেস্টের আগে দল ছিল ছত্রভঙ্গ। ৪-০ তে হারের আশঙ্কা তাড়া করে বেড়াচ্ছিল দলকে। সেই আশঙ্কাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে মেলবোর্নে জয়ের শিরোপা উঠেছে ভারতের মাথায়। ক্যাপ্টেন কোহলি তাই বলছেন,”কী অসাধারণ জয়! গোটা দলের পারফরম্যান্স অনবদ্য। ছেলেদের জন্য অত্যন্ত খুশি। বিশেষ করে রাহানের জন্য। এর চেয়ে খুশির খবর হতে পারে না। এরপর আমাদের শুধু উপরের দিকে ওঠার পালা।