রিভিউ
এ বন্ধুত্বে কোন আবেগ নেই। মুভি রিভিউ : ইয়ারা
সৌমেন্দু বাগ :বড় বড় নামধারী চিত্র পরিচালকেরা মনে হচ্ছে সবাই ছুটিতে রয়েছেন। কিছুদিন আগে অনুরাগ কাশ্যপ ঝুলিয়েছেন, এবার তিগমাংশু ধূলিয়াও একই কাজ করলেন। জি5 এ বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব দিবসেমুক্তি পেল ইয়ারা। কিন্তু একবারও মনে হলো না এই ছবির পরিচালক হাসিল, পান সিং তোমার বা সাহেব বিবি ঔর গ্যাংস্টার বানিয়েছেন।
ক্যালেন্ডারের পাতা কখনো পিছনে কখনো আগে ওল্টাতে ওল্টাতে চলা সিনেমার গল্প শুরু হয় দিল্লির এক আলিশান বাংলোয় যেখানে ফাগুন (বিদ্যুৎ জামাল), রিজওয়ান (বিজয় বর্মা), বাহাদুর (কেনি বাসুমতারি) এর সাথে দেখা হয় আমাদের যারা তাদের বহু বছর পিছনে ফেলে আসা বেপরোয়া, লাগামহীন, দুর্ধর্ষ জীবনের চক্রব্যুহতে ফের জড়িয়ে পড়ে তাদেরই একসময়ের ইয়ার মিতওয়া (অমিত সাধ) এর অপ্রত্যাশিত আগমনে।
নব্বইয়ের দশক থেকে গল্প পিছিয়ে যায় পঞ্চাশের রাজস্থানে যখন নিচু জাতের মানুষদের উপর রাজরাজড়াদের অত্যাচার, অবিরাম খুনখারাপি লেগেই আছে। সেখান থেকে যাত্রা শুরু দুই বাচ্চা ছেলের যারা পরেআরো দুজনের সাথে জোট বেঁধে ভারতের স্মাগলিং জগৎ দাপিয়ে বেড়াবে। ২ ঘন্টা ১০ মিনিটের ছবিতে পরিচালক শুধু যেন গল্পের উপরেই জোর দিয়ে ছবিটাকে দাঁড় করিয়েছেন। এত ঘটনাবহুল এবং বিস্তৃত গল্প হওয়ার কারণে গল্পের চরিত্রদের আবেগ, তাদের জীবন দর্শকের মনে ছুতেইপারেনি। যেন চারজন গ্যাংস্টারদের জীবন ২ ঘন্টায় দেখে ফেললাম ছবির এলবামের মতো। তিগমাংশু বাবু অন্য সব ছবির মতনই এই ছবিতেও নিজস্বতা রাখার চেষ্টা করেছেন-জাতপাত, নকশাল আন্দোলন, পুলিশি অত্যাচার, যৌন নির্যাতন সবকিছুকেই তাঁর গল্পে ছুঁয়ে ছুঁয়ে বেরিয়ে গেছেন এমনভাবে যে কোনো জিনিসই দর্শকের মনে ইফেক্ট ফেলতে পারেনি। তবে চিত্রনাট্য খুব দ্রুতগতির এবং বেশ টানটান। ফলে ছবি দ্রুত শেষ হয়ে যেতে অসুবিধে হবে না।
শুধুমাত্র গল্পটি বাদে ছবির ভালো লাগার জায়গা খুব কম। শ্রুতি হাসানকে একজন শক্তিশালী চরিত্র হিসেবে উপস্থিত করালেও পরে হারিয়ে যান। শুধুমাত্র বিদ্যুতের পাশে যেন সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবেব্যবহার করা হয়েছে। সেরকমই অপ্রয়োজনীয় আর খারাপ গানের ব্যবহার। অযথা একটা রোমান্টিক গান ঢোকানোর চেষ্টা আর একদমই আকর্ষণ না করা বিজিএম ছবিকে আরও খারাপ লাগার দিকে নিয়ে গেছে। সিনেমাটোগ্রাফিও সাধারণ মানের। গ্যাংস্টার জীবন টা ওয়েস্টার্ন ঘরানার ছবির আদলে করা হয়েছে। তো সেই জায়গাগুলোকে আরো আকর্ষণীয় ভাবে পেশ কেয়ার জন্য আরো ভালো ভাবে ক্যামেরার কাজ করা যেত। কিন্তু সেসব দেখা গেল না।
অভিনয় বলতে গেলে একমাত্র বলতে হয় অমিত সাধের কথা। যদিও এত দ্রুত গল্প আর কাহিনীর ঘনঘটায় অভিনয়ের সুযোগ কমে গেছে সবার। বিদ্যুৎ জামাল একশনে দক্ষ হলেও অভিনয়ে চূড়ান্ত ফ্লপ। তাঁর ছবি দেখতেবসলে কিছু অসাধারণ একশন সিকোয়েন্স দেখার সুযোগ থাকে। এক্ষেত্রে তাও নেই। বিজয় বর্মা আর কেনি ভাসুমাত্রি রও কিছু করার ছিল না গোটা ছবি জুড়ে। গোটা খেলার নীরব তাসের কার্ড হয়ে থেকে গেলেন। বিজয় বর্মার নিজস্ব দক্ষতায় একটা ছাপ ফেলে রাখলেও কেনি কে খুঁজে পাওয়া গেলো না।
ইয়ারা ছবিটি ২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ফরাসি ছবি Les Lyonnais (a gang story) এর রিমেক যে ছবির ব্যাপারে এক সমালোচক লিখছিলেন ,”…just too many moments of deja vu…”. একই কথা প্রযোজ্যহিন্দি ছবিটির ক্ষেত্রেও।যাই হোক, এই উইকেন্ডে প্রচুর ছবি মুক্তি পাচ্ছে। তিগমাংশু ধুলিয়ার এই কাজ দ্রুত ভুলে গিয়ে কিছু অসাধারণ কাজের প্রত্যাশা রাখাই যায়।
রিভিউ
মন্ত্রমুগ্ধ সঙ্গীতের এই বান্দিশ। ওয়েব সিরিজ রিভিউ : বান্ডিশ বান্ডিত্স
বিপাশা দাস : পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠতম জীব হলো গিয়ে মানব। শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী হওয়ার সাথে সাথে বিভিন্ন প্রকার গুণের ও অংশীদার তারা। সঙ্গীত যার মধ্যে একটি, লক্ষ্য করে দেখবেন নিত্যদিনের প্রত্যেকটি কর্মের মধ্যে আপনি সুরের আশ্চর্য মেলবন্ধন খুঁজে পাবেন। এই আশ্চর্য মেলবন্ধন কে কাজে লাগিয়ে পরিচালক অঙ্কিত তিওয়ারি বান্ডিশ বান্ডিত্স নামক একটি ওয়েব সিরিজ আমাজন প্রাইম এরপর্দায় নিয়ে এলেন।
গুরুর প্রতি শিষ্যের অপার ভক্তি, সঙ্গীতের প্রতি অনবদ্য প্রেম একজন নিষ্ঠাবান শিষ্যের পরিচয়। পুরাকালের কাহিনী তো সবার কাছে জ্ঞাত, গুরুদেব দ্রোণাচার্য একলব্য এর আঙ্গুল গুরুদক্ষিণা হিবেসে চেয়ে গুরুভক্তির নিদর্শন স্বরূপ অক্ষত রাখেন। তেমনি এই ছবিতে রাধে তার টাকুরদা পণ্ডিত রাধেমোহনকে নিজের গুরুভক্তি এবং প্রেমের নিদর্শন কঠোর পরিশ্রমের সাথে দিয়েছে।
এবার যদি সঙ্গীতের ব্যাখ্যা চান তাহলে বলবো যথাযথ তার কোনো ব্যাখ্যা হয় না। ইতিহাসের দিকে নজর দিলে বুঝতে পারবেন সঙ্গীতের মহিমা কতটা ব্যাপ্ত। আকবরের নবরত্ন অলংকৃত তানসেন নিজের সঙ্গীতেরদ্বারা বৃষ্টি নামাতে পারতেন, ক্ষিপ্ত হাতিকে শান্ত করার ক্ষমতা ও তার গানের দ্বারা ফুটে ওঠে। তবে এই ওয়েব সিরিজের শেষে এমনটাই পরিচয় পেয়ে থাকবেন। ইন্ডিয়ান ক্লাসিক্যাল গানের সঙ্গেপপ মিউজিক এর অসাধারণ যুগলবন্দি সত্যিই তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো। সাথে রাজস্থানের সাংস্কৃতিক প্রতিপত্তি,রাজার উপস্থিতি সবকিছুই যেনো ইতিহাসকে চোখের সামনে ফুটিয়ে তুলতে যথেষ্ট। আমাদের ভারতবর্ষে ফোক গানের কদর এক আলাদা স্তরেই বিদ্যমান, এত সুন্দর ভাবে তার পরিবেশন সাথে বিভিন্ন অসাধারণ কিছু রাগের উপস্থিতি ভারতীয় ক্লাসিক্যাল সঙ্গীতের প্রেমে পড়ার জন্য যথেষ্ট।
অতুল কুলকর্ণী, নাসিরউদ্দিন সাহ, তৃধা চৌধুরী, শিবা চড্ডা দের মত নামকরা কিছু তারকাদের উপস্থিতি দেখা গেছে। সবার তাক লাগিয়ে দেওয়া অভিনয় এর পরিচয় আমরা আগেও পেয়েছি এই ওয়েব সিরিজেওবেশ সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন কিন্তু ঋত্বিক ভৌমিক (রাধে) এবং শ্রেয়া চৌধুরী (তামান্না) র অসাধারণ অভিনয় সত্যিই প্রশংসনীয়। লিড রোল রাধের পুরো ওয়েব সিরিজ টিকে এক আলাদা জায়গায় স্থান দিয়েছে সাথে তার বন্ধু কবীরের কিছু হাস্যকর মুহূর্তও এবং অটুট বন্ধুত্বের সাক্ষী এই সিরিজটি।
ডিরেকশনে র কথা বললে রাজেস্থানের যোধপুর নামক এই শহরটির সৌন্দর্য্য কে নব বধূর সাজের সাথে মিলিয়ে ফুটিয়ে তুলেছে যা এককথায় অতুলনীয়। কিন্তু কোথাও গিয়ে কিছু খামতি চোখে ধরা পড়েই। অন্তরঙ্গ মুহূর্তের প্রকাশ থাকলেও অত্যধিক পরিমাণে অকথ্য ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে যার ফলে পরিবারের সঙ্গে বসে দেখার কোনো সুযোগই নেই। সিরিজটির শেষের দিকে পপ এবং ভারতীয় ক্লাসিক্যাল সঙ্গীতের ছোয়া তো দূর নায়িকার উপস্থিতিই সরিয়ে দেওয়া হয়। লেখার ক্ষেত্রে এসব খামতি এড়িয়ে যাওয়া দায়।
শ্রীরাম গণপথী র চলচ্চিত্রশিল্প সত্যিই খুবই সুন্দর ভাবে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এডিটিং এ লিড রোল রাধে র মাস্কড ম্যান এর থিওরী এবং তার উপস্থাপনা কে দুর্বল ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সবশেষে মনমাতানো গানের যুগলবন্দী টি সত্যিই অবিস্মরণীয়। সেটা যদি নাই দেখলেন তাহলে কি দেখলেন প্রশ্ন করতে হয়। সঙ্গীত জগতের তিন অনবদ্য সৃষ্টিকর্তা কর্তা সংকর মহাদেভান, এহসান এবং লয়ের হাত ধরেই এই সিরিজের যে উত্থান। তাদের গাওয়া প্রত্যেকটি রাগের মধ্যে যে আলাদাই আবেগ, অনুভূতি,বেদনা,বিরহ,প্রেমের স্পর্ধা প্রকাশ পেয়েছে যা সত্যিই না শুনে বোঝা সাধ্যের বাইরে।