কলমের আঁচড়ে
একটা ডায়েরি, একটা জার্নি, আর বিপ্লবের জন্ম..
![Social Update Bengali News Image](https://socialupdate.in/wp-content/uploads/2020/11/che-guevara_socialupdate.jpg)
সৌমেন্দু বাগ : ডিসেম্বর, 1951। বসন্তের সমারোহ কে চিরে গ্রীষ্ম বাসা বাঁধতে চাইছে আন্দিজের কোলে। ক্লাস, পরীক্ষা, লেকচারে ক্লান্ত মেডিক্যাল স্কুলের বুদ্ধিদীপ্ত এক ছাত্র তার সিনিয়র কাম বন্ধু আলবার্তো গ্রানাদোর সঙ্গে আলোচনা করছে সামনের লম্বা গরমের ছুটি টা কাটাবে কিভাবে? “চলো, উত্তর আমেরিকা ঘুরে আসি!”“আমেরিকা? কিভাবে?”“আরে ভাই , লা পদেরসা তে!”
না,আমেরিকা তাদের তখন যাওয়া হয়নি। কিন্তু আগামী 6 মাসে দুই অদম্য প্রাণশক্তি, পিপাসার্ত মন আর লা পদেরসা কে নিয়ে তারা যে ভ্রমণ করেছিলেন, তা শুধু তাদের জীবন এর নয়, গোটা বিশ্বের ইতিহাসের গতিপথকেও আমূল বদলে দিয়েছিল।
হ্যাঁ, এই গল্প সেই ভদ্রলোকের, মার্ক্সবাদী গেরিলা কমান্ডার হয়ে ওঠার আগে, তরুণ তরুণীদের টি শার্টে তাঁর মুখ বিখ্যাত হওয়ার অনেক আগে, এমনকি তাঁর সাধের ডাকনাম‘চে’ নামে বন্দিত হওয়ার ও আগে, এক ভ্রমণপিপাসু, চঞ্চল ২৩ বছরের যুবকের, যে শুধু দেখতে পেয়েছিল এক সুদূর বিস্তৃত ধুলোমাখা রাস্তায় তারা দুজনে ছুটে যাচ্ছে দিগন্তের দিকে।
“All we could see was the dust on the road ahead and ourselves on the bike, devouring kilometers in our flight northward,”
রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্স এর রাজকীয়তা ছাড়িয়ে, মিরামারের সৌন্দর্যে ভালোবাসাকে ভাসিয়ে দিয়ে, শক্তিশালী লা পদেরসা অতিক্রম করে যায় ঊষর পম্পাস প্রান্তর থেকে আন্দিজের চড়াই। চিলি পৌঁছাতেই“the mighty one” ও জবাব দিয়ে বসলে, তারা বাহনহীন হয়ে পড়ে ঠিকই, কিন্তু তা তাদের ইচ্ছাশক্তি কে দমিয়ে দিতে পারেনি। কখনো পদব্রজে, কখনো মালবাহী গাড়ি, কখনও ঘোড়া, কিংবা পুলিশ ভ্যানে চড়ে তারা একের পর এক প্রতিকূলতা অতিক্রম করে তারা টিটিকাকা হ্রদ থেকে মাচু পিচুর ধ্বংসাবশেষ, লাতিন আমেরিকার ইতিহাসকে চোখ ছুঁয়ে দেখছেন তারা।
কিন্তু শুধুই কি সৌন্দর্য্য আর ইতিহাস? মাচু পিচু পৌঁছানোর আগে পেরিয়ে এসেছেন শুষ্ক, রুক্ষ্ম, মরুপ্রান্তরের মধ্যে চুকুইকামাতা বলে একটা শহরের বুকে গড়ে ওঠা তামার খনি, যেখানের শ্রমিকরা দুটো পয়সার জন্য প্রাণ বাজি রেখেও খেটে চলেছে। আর যে অর্থ টুকু তারা পায়, তা দিয়ে হসপিটালে এক রাতের ভাড়া মেটানো যায় না। কই ,এত এতো মানুষ লাতিন আমেরিকা ঘুরে ভ্রমকাহিনী লেখেন, তাদের কথা সেখানে থাকে না? তাদের কথা কি বইয়ে ছাপবার যোগ্য নয়? সবাই বলে লাতিন আমেরিকায় পর্তুগিজদের কৃতিত্বের কথা, কিন্তু সেই কৃতিত্বের সিংহাসনের তলায় চাপা পরে যাওয়া ইনকা সভ্যতার কথা কারোর মনে পড়ে না। মাচু পিচুর ভাঙা দেয়ালে বসে আর্নেস্ট যখন এসব লিখছেন, তার মনের গভীরে কোথাও যেন এই সমস্ত অবিচার, শোষণ আর স্বাধীনতার সুতীব্র বাসনার জন্ম হচ্ছিল না! এখানেই তাঁর‘মোটরসাইকেল ডায়েরিজ’ এর শ্রেষ্ঠত্ব। ইহা শুধু একটা সাধারণ ভ্রমনকাহিনী তো নয়, এক ঐতিহ্যশালী মহাদেশের যন্ত্রণার দলিল, সেইসঙ্গে এক যুবকের বিপ্লবচেতনার জনক।
চারপাশে মূর্তমান দারিদ্রের কশাঘাত চে’র তরুণ মনে গভীর রেখাপাত করে। তিনি চোখ মেলে দেখতে পান তার চেনা জগতের সাথে সমান্তরালে বয়ে চলা এক অচেনা জগত, শোষিত মানুষের জগত। এই ভ্রমণ থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে চে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, এই অঞ্চলে বদ্ধমূল অর্থনৈতিক বৈষম্যের স্বাভাবিক কারণ হলো একচেটিয়া পুঁজিবাদ, নব্য ঔপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ। চে অনুভব করেন, পরিবর্তন অনিবার্য; কিন্তু সেই পরিবর্তন কিভাবে সম্ভব হবে সেই সম্বন্ধে কোনো স্পষ্ট ধারণা তখনো তৈরি হয়নি তাঁর মনে। তিনি তখনো একজন ডাক্তারের দৃষ্টিভঙ্গিতেই সমস্যা গুলি অনুধাবন করার চেষ্টা করতেন।“The biggest effort Chile should make is to shake its uncomfortable Yankee friend from its back, a task that for the moment at least is Herculean.” – Che Guevara
পুঁজিবাদের শোষণ, মানুষের শ্রমের অমর্যাদা দেখে আসার পর সমাজের আরো একটা দিক আবিষ্কার করে , তারা যখন ভয়ঙ্কর আমাজন পেরিয়ে পৌঁছায় পূর্ব পেরুর ‘ লেপার কলোনি’ তে, যেখানে প্রায় 600 কুষ্ঠ রোগীর চিকিৎসা করা হয় সম্পূর্ণ মানবিকভাবে। সমাজ থেকে বিতাড়িত সমস্ত রোগীকে সেখানকার ‘মাদার’ রা যেভাবে বুকে টেনে নিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করছেন , পর্যাপ্ত অর্থ, ডাক্তার, ওষুধ না থাকা সত্তেও, আরনেস্ত কে তা মুগ্ধ করেছিল। তিনি এবিং আলবার্তো স্বেচ্ছায় সেখানে কয়েক সপ্তাহ থেকে তাদের চিকিৎসায় সাহায্য করেন , রোগীদের সাথে ফুটবল খেলেন, নিজের জন্মদিন পালন করেন- মোটকথা তাঁর সমগ্র ভ্রমনের মধ্যে এই সময় টুকু তিনি প্রাণ খুলে উপভোগ করতে পেরেছেন।
“The psychological lift it gives to these poor people—treating them as normal human beings instead of animals, as they are used to—is incalculable,”- Guevara
আমাজনের বুকের উপর দিয়ে বয়ে চলে দুই যুবক ফিরে আসে তাদের সমাজে। সাথে নিয়ে বিষন্নসুন্দর অভিজ্ঞতা। আলবার্তো কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় যুক্ত হয়ে পড়লেও আরনেস্ত পারলেন না। মেক্সিকো থেকে মাজেলান প্রণালীর মানুষদের যন্ত্রণা, হাহাকার, অসহায়তা তাকে ক্রমাগত দংশন করতে থাকে। তিনি আবার রওনা দেন, আরো উত্তরে, ঔপনিবেশিকতার চাকচিক্য ছেড়ে বারবার ফিরে যান চির বসন্তের শহরে যেখানে বসন্ত চাপা পড়ে গেছে ইট- কাঠ পাথরের ভিড়ে।ডায়েরির পাতা শেষ হয়ে আসে, মেঘমুক্ত এক হেমন্তের রাতে আবির্ভূত হয় এক ছায়ামূর্তি, তার জ্বলন্ত চোখ নিয়ে বলে ওঠে-“The future belongs to the people, and gradually , or in one strike, they will take power,here and in every country.”
আমরা জানি না সে কে ছিল, তাদের কোনো আলাদা পরিচয় থাকে না। তারা আসে ধূমকেতুর মতো পরিষ্কার আকাশে, এক মুহূর্তের জন্য জমে থাকা অন্ধকারকে আলোকিত করে মিলিয়ে যায় মহাকাশে। আর এক চব্বিশ পেরোনো যুবক কোনো স্বপ্ন পূরণ হওয়ার‘উইশ’ করে না, সে তার স্বপ্ন পূরণের প্রতিজ্ঞা নেয়।”…I would be with people. I know this, I see it printed in the night sky that I… will take my bloodshed weapon and, consumed with fury, slaughter any enemy who falls into my hands.” I feel my nostrils dilate, savouring the acrid smell of gunpowder and blood, of the enemy’s death; I steel my body, ready to do battle, and prepare myself to be sacred space within which the bestial howl of the trimphunat proletariat can resound with new energy and hope.”
দি মোটরসাইকেল ডায়েরিজ’ তাই সেই ভ্ৰমন কাহিনী, যা তথাকথিত প্রিভিলেজদের‘ভ্রমণ’ এবং‘ভ্রমণকাহিনী’ এর ধারণা কে ভেঙে দেওয়া এক যুগান্তকারী সৃষ্টি, যা আমাদের সাহায্য করে স্টাইলিশ টি শার্টের আর ব্র্যান্ড এর ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া বিপ্লবী‘চে’ কে চিনতে,‘বিপ্লব’ কে চিনতে, পৃথিবীর বুকে ঘটে যাওয়া এক রূপকথার নায়কের জন্ম জানতে..
কলমের আঁচড়ে
পৃথিবীর বুকে মেনে চলা কিছু বিস্ময়কর এবং ভয়ঙ্কর সত্কার-রীতি!
![Social Update Bengali News Image](https://socialupdate.in/wp-content/uploads/2021/02/1_Family-Members-Perform-Manene-Ritual-To-Honor-The-Spirits-Of-Their-Mummified-Ancestors-Nort-Toraja.jpg)
বিশ্বজিৎ দাস : কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত বলে গেছেন “জন্মিলে মরিতে হবে অমর কে কোথা কবে?” অর্থাৎ জন্মগ্রহণ করলে আমাদের মৃত্যু অনিবার্য। মানুষের মৃত্যুর পর সৎকার করা হয়। সভ্যতার প্রথম দিক থেকেই এই নিয়ম চলে আসছে। এই সৎকারের সময় টা খুবই কঠিন, বিশেষত নিকটজনের কাছে। সে সব আঁকড়ে থাকে, কারণ একবার ছেড়ে দিলে আর পাওয়া যাবে না। এই ভাবাবেগ থেকেই স্মৃতি রক্ষার ভাবনা শুরু। মৃতের ব্যবহৃত জিনিস রেখে দেওয়া, যেমন চুল কিছুটা কেটে যত্ন করে রেখে দেওয়া ছিল পুরনো প্রথা। অনেকে দাঁত সংরক্ষন করত। বুদ্ধের দাঁত কলকাতার জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে আজও।
কিন্তু পৃথিবীর প্রত্যেক জাতির মধ্যেই মৃত্যুর পর কিছু বিশেষ নিয়ম পালন করার রীতি আছে। কিছু নিয়ম বিজ্ঞানসম্মত আবার কিছু একেবারে অদ্ভুত। মৃতদেহ সত্কারের জন্য কেউ যেখানে মৃতদেহটি পুড়িয়ে ফেলেন, আবার কেউ বা মাটিতে কবর দেন। আবার কেউ বা সযত্নে সেটিকে কফিনজাত করেন। কিন্তু এসবের বাইরেও এমন অনেক রীতিনীতি আছে যেগুলি আমার আপনার স্বাভাবিক ভাবনা চিন্তার বাইরে।
সাধারণ মানুষের কাছে মৃত ব্যক্তিকে মাটিতে কবর দিয়ে রাখা বা আগ্নিদাহ করা পরিবেশগত কারণে মোটামুটি স্বাভাবিক মনে হলেও কিছু কিছু সংস্কৃতিতে মৃত ব্যক্তি সমাহিত করার পদ্ধতি অবাক করার মতো।
পৃথিবী জুড়ে চলা এই আশ্চর্য ও কিছুটা ভয়ঙ্কর মৃত্যু অনুষ্ঠান গুলি হল :
১. মমিফিকেশন :
![Social Update Bengali News Image](https://socialupdate.in/wp-content/uploads/2021/02/mummification.jpg)
এই ঘটনা আমার আপনার কিছুটা জানা। প্রাচীন মিশরের ফারাওদের মরদেহ মমি করে সমাহিত করা হতো। এই পদ্ধতিতে প্রথমে দেহের অভ্যন্তরীণ সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বের করা হয়। এরপরে দেহের সব আর্দ্রতা অপসারিত করা হয়। শেষে লম্বা আকৃতির লিনেন কাপড় দিয়ে দেহ মুড়ে ফেলা হয়।
তবে আধুনিক মমিফিকেশন পদ্ধতি আলাদা।বর্তমানে মৃতদেহ সংরক্ষণের জন্য কিছু রাসায়নিক তরল ভর্তি পাত্রে দেহ ডুবিয়ে রাখা হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এটি মৃতদেহ সৎকারের কোনো রীতি নয়; এটি মৃতদেহ সংরক্ষণ পদ্ধতি।
২. মৃতের পুনর্জাগরণ :
![Social Update Bengali News Image](https://socialupdate.in/wp-content/uploads/2021/02/madagaska.png)
এই অদ্ভুত প্রথাটি পালন করা হয় মাদাগাস্কায়। প্রতি পাঁচ থেকে সাত বছর পর পর। তার নিকটাত্মীয়রা কবর খুঁড়ে মৃত ব্যক্তির দেহাবশেষ বের করে আনে। এরপর মৃত ব্যক্তিকে নতুন পোশাক পরানো হয় এবং পারিবারিক ভোজে তাকে বসিয়ে রাখা হয়।এদিন মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে গানের তালে তালে নাচতেও দেখা যায়। পারিবারিক পুনর্মিলন হিসেবে প্রথাটিকে দেখা হয়।
৩. এন্ডোক্যানিবালিজম (Endocannibalism) :
![Social Update Bengali News Image](https://socialupdate.in/wp-content/uploads/2021/02/Endocannibalism-1.jpg)
এই বিশেষ মৃত্যু অনুষ্ঠানটি দেখতে পাওয়া যায় আমাজন রেইন ফরেস্টের ইয়ানোমমি উপজাতি, পাপুয়া নিউ গিনির মেলানসিয়ানস উপজাতি এবং ব্রাজিলের ওয়ারীরা উপজাতির মধ্যে।এখানে একটি মৃতদেহকে বা দেহাংশকে ভক্ষণ করা হয়। তাদের বিশ্বাস এই প্রথার মধ্যে দিয়ে মৃত ব্যাক্তির আত্মা স্বর্গে যাবে।
এই জাতির মানুষেরা বিশ্বাস করেন, মৃত্যু কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়। উপরন্তু তারা ভাবেন যে, তাদের প্রতিদ্বন্দী গোষ্ঠী কোনো অশুভ আত্মাকে প্রেরণ করেছে। সেই কারণে এই ঘটনা রোধ করার জন্য তারা এই অনুষ্ঠানটি করে থাকেন। যাতে মৃত ব্যাক্তির আত্মা জীবিত থাকে এবং তার পরবর্তী প্রজন্মকে রক্ষা করতে পারে।
এই অনুষ্ঠানটি করার জন্য প্রথমে তারা মৃতদেহটিকে পাতা দিয়ে মুড়ে বাড়ি (যেখানে তিনি মারা গেছেন) থেকে অল্প দূরে জঙ্গলে রেখে আসেন। এর পর মোটামুটি ৩০ থেকে ৪৫ দিনের মাথায় সেই পঁচাগলে যাওয়া মৃতদেহ থেকে হাড় সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। এরপর কলা দিয়ে বানানো একধরণের সুপের মধ্যে মৃতদেহের ছাই মিশিয়ে গোষ্ঠীর সকলে সেটি পান করে। তবে এই নিয়ম শুধুমাত্র গোষ্ঠীর শিশু ও মহিলারা পালন করেন।
৪. তিব্বত বৌদ্ধ মহিমা কবর/ তিব্বতের আকাশ সৎকার (Tibetan Buddhist Celestial Burials or Sky burial) :
![Social Update Bengali News Image](https://socialupdate.in/wp-content/uploads/2021/02/Sky-Burial-1024x535.jpg)
এই সৎকার অনুষ্ঠানটি তিব্বতি ঐতিহ্যের প্রতীক। এই অনুষ্ঠানে মৃতদেহকে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে পাহাড়ের মাথায় রেখে আসা হয় এবং পাখিদের (বিশেষত শিকারী পাখিদের) ওই দেহাংশ ভক্ষণ করতে দেওয়া হয়। অনেক সময় অক্ষত মৃতদেহও রেখে দেওয়া হয় এই পাখিদের খাদ্য হওয়ার জন্য।
বৌদ্ধ ধর্ম অনুসারে মৃতদেহকে খালি জাহাজ মনে করা হয় যা সংরক্ষনের কোনো দরকার নেই।মূলত, তিব্বতের কঠিন জলবায়ু ও পাথরে ভরা জমিতে কবর দেওয়া এক পক্ষে অসম্ভব।৫. সাসপেন্ড কবরস্থান (Suspended Burials) : এই সৎকার অনুষ্ঠানটি প্রাচীন চীন বংশের মধ্যে দেখা যায়। এখানে তারা মৃতদেহকে কফিনে পুড়ে উঁচু পাহাড়ের গায়ে অবস্থিত শিলার উপর ঝুলিয়ে রেখে দেয়। সাধারণের বিশ্বাস, মৃতদেহকে আকাশের কাছাকাছি রাখা উচিত যাতে তারা বন্য প্রাণীদের নাগালের বাইরে এবং ভগবানের নাগালের মধ্যে বা কাছাকাছি থাকতে পারে।
৫. সতী :
![Social Update Bengali News Image](https://socialupdate.in/wp-content/uploads/2021/02/sati1-v1-1-1024x658.jpg)
উপযুক্ত কারণেই হিন্দু ধর্মে সতীদাহ প্রথার প্রচলন বর্তমানে নিষিদ্ধ। তবুও একটা সময়ে এই নিষ্ঠুর ও অমানবিক সৎকার হিন্দু ধর্মের এক সনাতনী ঐতিহ্য হিসাবেই মানা হত। এই রীতি অনুযায়ী, মৃত ব্যাক্তির স্ত্রী কে বধূবেশে সাজিয়ে একই চিতায় মৃত্যু বরণ করতে হত। সেই সময় দাবি করা হত, সতীদাহ প্রথার মাধ্যমে মৃত স্ত্রী সতিরূপে স্বর্গলাভ করবে।
৬. ভাইকিং ফিউনারেল (The Viking Funeral) :
![Social Update Bengali News Image](https://socialupdate.in/wp-content/uploads/2021/02/VikingFuneral.jpg)
এটি একটি অন্যতম নৃশংস সৎকার অনুষ্ঠান। এই রীতি অনুযায়ী মৃতদেহকে একটি অস্থায়ী কবরে দশ দিনের জন্য রাখা হত। পাশাপাশি চলত মৃতের জন্য নতুন জামাকাপড় তৈরির কাজ। অন্যদিকে একজন ক্রীতদাসীকে বেছে নেওয়া হত, যে ওই মৃত মানুষটির পরবর্তী জীবনের সঙ্গিনী হবে। এরপর সেই মেয়েটি ওই গ্রামের সকলের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতো। তাদের মতে এই বর্বরতায় নাকি ছিল মৃতব্যাক্তির প্রতি প্রেম নিবেদন। তারপর ওই দাসীর গলায় ফাঁস দিয়ে এবং সবশেষে ছুরি মেরে হত্যা করা হতো।
এরপর একটি কাঠের জাহাজে মৃত ব্যাক্তির সাথে তাকেও রেখে দিয়ে অগ্নি সংযোগ করা হত।
৭. আঙুলের আবৃততা (Ritual Finger Amputation) :
![Social Update Bengali News Image](https://socialupdate.in/wp-content/uploads/2021/02/Finger-Amputation.jpg)
এই মৃতদেহ সৎকারের নিয়মটি পাপুয়া নিউ গিনির দানি জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রচলিত।
এই নিয়ম অনুযায়ী বাড়ির কোনো প্রিয় ব্যক্তি মারা গেলে তার সঙ্গে সম্বন্ধিত মহিলা ও শিশুরা তাদের আঙুলের কিছু অংশ কেটে ফেলত। এরপর কাদা ও ছাই মুখে মেখে মৃতব্যক্তির জন্য শোক প্রকাশ করত।
৮. টোটেম পোলস (Mortuary Totem Poles) :
![Social Update Bengali News Image](https://socialupdate.in/wp-content/uploads/2021/02/Mortuary-Totem-Poles-1024x686.jpg)
স্থানীয় সভ্যতার বিভিন্ন গল্প তুলে ধরার জন্য টোটেম পোল তৈরি করা হয়। হায়দা উপজাতির মধ্যে এই রীতি দেখতে পাওয়া যায়। এই রীতি অনুযায়ী মৃতব্যাক্তির শরীরকে পেটানো হবে যতক্ষন না এটি একটি ছোট বাক্সে এঁটে যায়।এরপর এই বাক্সটি একটি টোটেম পোল এর উপর রেখে মৃত ব্যাক্তির বাড়ির সামনে রেখে আসা হয়।
৯. বারিড ইন ফ্যান্টাসি কফিন (Buried in a fantasy Coffin) :
![Social Update Bengali News Image](https://socialupdate.in/wp-content/uploads/2021/02/Buried-in-a-fantasy-Coffin.jpg)
এই রীতি অনুযায়ী মৃতদেহকে এমন একটি কফিনে রাখা হয় যেটি তার জীবনকে অথবা পেশাকে উপস্থাপনা করে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো বিমান চালক কে বিমানরূপী কফিনে, কোনো জেলেকে মাছরূপী কফিনে আবার কোনো ধনী ব্যাবসায়ীকে একটি দামি গাড়ীরূপী কফিনে রাখা হয়।
১০. অন্ধ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া (Blindfolded funeral) :
এই মৃতদেহ সৎকারের রীতি অনুযায়ী মৃতদেহের চোখ বেঁধে তাকে বাড়ির মুখ্য দরজার সামনে রেখে দেওয়া হয়। এটি দেখা যায় উত্তর পশ্চিম ফিলিপিনেসে।
এছাড়াও সারা পৃথিবী জুড়ে আরও নানান ধরনের অদ্ভুত এবং ভয়ংকর সৎকার অনুষ্ঠান দেখতে পাওয়া যায়।