রুকস্যাক
আমার চোখে দেখা দিল্লি – আগ্রা (পর্ব – ৭)
পর্ব ৭, যোধাবাঈ মহল
রীতা বসু : টিকিট কেটে আমরা যোধাবাঈ মহলে প্রবেশ করলাম।আগেই বলেছি সম্রাট আকবরের হৃদয়ে রাজপুতদের একটা বিশেষ স্থান ছিল তার কারনও বলেছি তার উপরে এটা যোধাবাঈ মহল সুতরাং এখানে রাজস্থানে শিল্পকলা যেএকটা বিশেষ স্থান পাবে সেটা বলাই বাহুল্য।প্রসস্ত প্রাঙ্গন ঘিরে অনেক মহল আমরা বিশেষ কিছুই দেখব এবং বলব।এখানে আছে পন্চমহল অর্থাৎ পাঁচটি তলা বিশিষ্ট মহল যার নীচের তিনটি তলায় সম্রাটেরতিন বেগমের আবাসস্থল আর উপরের দুটি তলা তাঁদের বিশ্রামস্থল সাদা বাংলায় হাওয়া খাওয়ার জায়গা,সেই সময় তো আমাদের মতো এসির হাওয়া খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল না।এরপর দেখলাম যোধাবাঈ এর পূজোর ঘর।ঠাকুর বসাবার জায়গা আছে,আছে দেয়াল গিরির ব্যবস্থা। সর্বত্রই রাজস্থানি শিল্পকলা বিরাজমান।
এখানে দাঁড়িয়ে আমরা সেসবই আলোচনা করছিলাম,একজন পৌঢ় গাইড কয়েকজন বিদেশি পর্যটকদের নিয়ে এসেছিলেন আমাদের আলোচনা তিনি বুঝে থাকবেন তাঁর বক্তব্য এই সব কিছুই অনুমান এবং ঐতিহাসিকদের গবেষনা মাত্র, সত্যতার কোনো প্রমান নেই,প্রমান করবার উপায়ও নেই।কথাটা যুক্তিগ্রাহ্য মনে হলো।কারন দুশ বছরের ইংরেজ স্বাশনে অনেক কিছুই বিলুপ্ত হয়েছে।এলাম অনুপ তালাও দেখতে। এটা একটি জলাশয়, এক সময় হয়তো স্বচ্ছ জল ছিল এখন শ্যাওলায় সে জল সবুজ।এর উপরে একটি সাদা পাথরের বেদী।শোনা যায় এখানে বসে তানসেন গান গাইতেন। সামনেই একটি দোতলা মহল অনুমান করা হয় সেখানে বসে সম্রাট গান শুতেন। ছোটোবেলায় শুনেছি সম্রাটরা বাঁদীদের ঘুঁটি বানিয়ে শতরন্চ বা দাবা খেলতেন মেঝেতে দাবার কোটের কিছু নিদর্শন আজোও বিদ্যমান।সামনে একটি কালো পাথরের বেদী হয়তো সম্রাট ওখানে বসে ঘুঁটি চালনা করতেন। মহল থেকে বেরিয়ে শাহী রান্নাঘর।কোনো কিছুই ভিতরে গিয়ে দেখার উপায়নেই সব তালা বন্ধ।
এলাম সম্রাটের কোষাগারে।দেখলাম দেওয়াল ঘেঁসে পাথরের স্লাইডিং ঢাকনা দেওয়া ড্রয়ারের মতো যেখানে মুদ্রা রাখা হোতো,মেঝেতেও অনুরূপ ব্যবস্থা তবে তা মেঝের সাথে মিশে আছে হয়তো সে সময় খোলার বিশেষ কোনো ব্যবস্থা ছিল। এবার এলাম দেওয়ানি খাসে।সুন্দর কারুকাজ করা মহল।মাঝখানের স্তম্ভটি অতি সুন্দর এটাকে লোটাস পিলার বলা হয়। সম্রাট আকবর সমস্ত ধর্মের প্রতি ছিলেন শ্রদ্ধাশীল তবে চিস্তি সম্প্রদায়ের প্রতি ছিলেন বেশি অনুরক্ত হয়তো সেটা সেলিম চিস্তির প্রভাব।ঐতিহাসিক মতে সম্রাট এখানে বসে সব ধর্মের প্রাজ্ঞ ব্যক্তিদের সাথে ধর্মালোচনা করতেন।তিনি সমস্ত ধর্মের ভালো দিকগুলো নিয়ে একটি নতুন ধর্মসৃষ্টি করেন যার নাম দিন-ই-লাহী।সম্রাটের অবসানের পরই সে ধর্ম বিলুপ্ত হয়।মনে করা হয় দিন-ই-লাহীর জন্ম এখানেই।
এবার এলাম দেওয়ানি আমে।এটিও খুব সুন্দর।সম্রাট আকবরের সময় থেকে সম্রাট সপ্তাহে একদিন আমজনতাকে দর্শন দিতেন একটি অলিন্দ থেকে সেই অলিন্দ ফতেপুর সিক্রিতে নাকি এখানে সেটা বলতে পারছি না কারন আমরা সেটা দেখতে পাই নি।হতে পারে সেটা বিলুপ্ত বা আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে।
অনুপ তালাও ছাড়া এখানে কোনো জলাশয় দেখলাম না।আগ্রা ফোর্টে যেমন সম্রাট আকবরের তৈরী সিঁড়িযুক্ত বিশাল ইঁদারা বা বাউলি দেখেছিলাম এখানে তাও দেখলাম না।বোঝা গেল এখানে জলকষ্ট ছিল।এটাই হয়তোসম্রাটের এই স্থান পছন্দ সত্বেও রাজধানি আগ্রাতে নিয়ে যাবার একটি কারন এছাড়া অন্য প্রদেশের সাথে যোগাযোগের অসুবিধা তো ছিলই।
এবার আমাদের ফিরে যাবার পালা। পিছনে পরে রইল ইতিহাসের সাথে আমাদের মন,আমরা এগিয়ে চললাম আগ্রার দিকে।আজই আমাদের আগ্রাতে শেষ দিন। কাল সকাল দশটায় দিল্লী যাবার টিকিট কাটা আছে ভলভো বাসে।
আগ্রা পৌঁছাতে বিকেল হলো। এখানকার বিখ্যাত মিষ্টি আনারসের মোরোব্বা যার নাম পেঠা। পেঠা কেনা ও খাওয়া হলো।এবার হোটেলে ফিরে বিশ্রাম।
রুকস্যাক
ভ্রমণ : বাগুরানের বেলাভূমিতে।
দেবস্মিতা ঘোষ : বাতাসে শীতের আমেজ, সোনালী রোদের অকৃত্রিম স্নেহে আগলে নেওয়া স্বভাব, সুনীল আকাশ সবে মিলে প্রকৃতি যেন কোল পেতে বসে দুবাহু বাড়িয়ে অপেক্ষা করছে। আর আপনিও বুঝি নাগরিক ঘোড়দৌড়ে বিধ্বস্ত ????
বেশি নয়, ব্যস্ততার চোখরাঙানি থেকে এক কি দুই দিনের ছুটি বন্দোবস্ত করতে পারলেই মিলবে মুক্তির আস্বাদ। দিগন্তজোড়া নীলের মেলবন্ধন, চোখের পাতায় নেমে আসা বালির চড়, গর্জনরত সমুদ্রের ঢেউ এর মাঝে একান্তে অবসার কাটাতে পৌঁছে যান পূর্ব মেদিনীপুরের বগুড়ান জলপাই এর সমুদ্র তটে।
কলকাতার ধর্মতলা থেকে বাস ধরে বা হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেন এ কাঁথি পৌঁছে যান। কাঁথি থেকে টোটোতে ২৫০-৩০০ টাকার বিনিময়ে প্রায়ে ২৪ কিমি পথ অতিক্রম করে ঘন্টাখানেকের মধ্যেই পৌঁছে যান বগুড়ান জলপাই এর সমুদ্রতীরে। সমুদ্র এখানে শান্ত।
আর একটি অভিনব বিষয় হল জোয়ারের সময় সমুদ্র তীরের অনেক কাছে চলে আসে আবার ভাটার সময় অনেক দূরে চলে যায়। সারা তত জুড়ে দেখতে পাওয়া যায় লাল কাঁকড়ার অবাধে ছুটোছুটি করে লুকোচুরি খেলা। সমুদ্রে সূর্যোদয় সাক্ষী থাকা এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। তাই হাতে ছুটি একদিন বেশি থাকলে একদিন থেকে যাওয়ায় ভালো।
দিঘা, মান্ডারমনি বা জুনপুটের মতো পর্যটন এর ঘেরাটোপ বগুরান কে গ্রাস করেনি এখনো। তাই অফবিট এ নিরিবিলি ছুটি কাটানোর সেরা ঠিকানা হল বগুরান। জুনুপুট সমুদ্রতীর, দরিয়াপুর, কপালকুণ্ডলা মন্দির কাছাকাছির মধ্যেই ঘুরে দেখে নেয়া যায়। এখান থেকে আপনি আশে পাশের সমুদ্রসৈকত গুলিও ঘুরে আসতে পারেন যেমন বাঁকিপুট, দিঘা, মান্ডারমনি, তাজপুর।
তবে এখানে রাত্রিবাসের একমাত্র ঠিকানা হলো হোটেল সাগর নিরালা। কারণ খুব বেশিদিন হয়নি বগুরান বাংলার ভ্রমণ মানচিত্রে স্থান করে নিয়েছে। শহুরে জীবন যেসমস্ত সুবিধায় অভ্যস্ত সেই সব রকম সুবিধা এবং তিনবেলার আহার নিয়ে রাত্রিবাসের খরচ মোটামুটি কমবেশি ১০০০ টাকা।
এই শীতে তবে উইকেন্ডে প্ল্যান করেই ফেলুন বগুরান জলপাই সমুদ্রসৈকত ভ্রমণ। রোদ্দুরে পিঠ পেতে বসে বালিতে আঙ্গুল দিয়ে বিলি কেটে কেটে, কিংবা লাল কাঁকড়ার দল কে গর্ত অবধি ধাওয়া করে, কিংবা আবার ভোরের আধো আলোয় প্রিয়জনের সাথে ঝিনুক কুড়িয়ে দারুন কাটবে ছুটির দিনগুলো।