কলমের আঁচড়ে
আ ত্ম নি র্ভ র

অনুপম চৌধুরী : সম্প্রতি, “আত্মনির্ভর” কথাটি ঘরে ঘরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, এবং হওয়াটাই স্বাভাবিক। করোনা মহামারীর করাল দৃষ্টি সাধের ভারতবর্ষের উপর পড়ার পর, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের জনগণের উদ্দেশ্যে পঞ্চমবার ভাষণ দিয়ে তাদের আত্মনির্ভর বা স্বনির্ভর হতে বলেছেন। অভিপ্রায় এই যে, জনগণের আত্মনির্ভরতা সমগ্র ভারতবর্ষের আত্মনির্ভরতায় সহায়ক হবে। আত্মনির্ভর ভারতবর্ষ যে তাঁর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য, তা “মেক ইন ইণ্ডিয়া” প্রভৃতি প্রকল্প থেকেই খুব স্পষ্ট।
কিন্তু, এমতাবস্থায় দাঁড়িয়ে কয়েকটি প্রশ্ন বিবেচ্য। এই আত্মনির্ভরতা কথাটির অর্থ কী, কেন বলা হয়েছে আত্মনির্ভর হতে? আত্মনির্ভরতার তাৎপর্য কী, আর এতাদৃশ সঙ্কটকালে আত্মনির্ভরতার প্রাসঙ্গিকতাই বা কতটুকু? এছাড়াও, স্বয়ং-সম্পূর্ণতার ভাবই কি আত্মনির্ভরতা, নাকি এদুটি পরস্পর ভিন্ন? প্রথমত, কোনো অসিদ্ধ সাধনের হেতু যখন কোনো ব্যক্তি কেবলমাত্র নিজের উপরেই নির্ভরশীল, তদ্ভিন্ন অন্য কারো উপরে নয়, সেটিকে চরমপন্থী আত্মনির্ভরতা বলা যেতে পারে। এক্ষেত্রে, সেই ব্যক্তি যেকোন পরিস্থিতিতেই অপরাপর কারো কাছে কোনোপ্রকার সাহায্য যাচ্ঞা করবে না। দ্বিতীয়ত, কোনো অসিদ্ধ সাধনের হেতু যখন কোনো ব্যক্তি মুখ্যত তার নিজের উপর নির্ভরশীল, সেটিকে বলা যেতে পারে নরমপন্থী আত্মনির্ভরতা। এক্ষেত্রে, ব্যক্তি নিজের অপটুতা বা অক্ষমতার কারণে অপরাপর ব্যক্তির নিকট সাহায্যপ্রার্থী হতে পারে। এই দুই ধরণের মধ্যে কোনটি প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রেত, তা বলা কঠিন। কারণ, উনি সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। তবে, এদুটির মধ্যে প্রথমটি বৃহত্তর সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে ভয়াবহই হয়ে থাকে।
আসি পরের কথায়, মানুষ যখন বুঝতে পারে যে কোনো একটি কাজ সে নিজেই করতে পারবে, তবে সেই কাজ করার ক্ষেত্রে সে অপর কাউকে ‘তেল মারতে যাবে না’, অর্থাৎ অপর কারো সাহায্য যাচ্ঞা করবে না। কিন্তু কিছু ক্ষেত্র এমন থাকে যেগুলিতে মানুষ পরনির্ভর হয়ে নিশ্চিন্ত হয়, যথা – সামাজিক সুরক্ষা, মুদ্রাস্ফীতি রোধ, নিত্য-প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও চাকুরীর লভ্যতা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দুঃসময়ে অর্থ ও খাদ্যদ্রব্যের জোগান, প্রভৃতি। ঠিক এই কারণেই, সরকার বা গভর্নিং বডি’র উপর মানুষের চূড়ান্ত নির্ভরতা। কিন্তু, সেই জায়গা থেকেই যখন আত্মনির্ভরতার বার্তা অাসে, সেটা উপরোক্ত ক্ষেত্রগুলিতে সরকারের ব্যর্থতা ঢাকবার জন্য কিনা, তা জনগণের ভেবে দেখা উচিৎ। এবার আসি আত্মনির্ভরতার তাৎপর্য প্রসঙ্গে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই, একজন স্বনির্ভর ব্যক্তি তার চাহিদার একটা নির্দিষ্ট কাঠামো সঙ্গে নিয়ে ঘোরাফেরা করে। অর্থাৎ, সেই কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত নয় এমন কোনো ‘আলপটকা’ জিনিস সে চেয়ে বসে না। কেন? কারণ, সে তার নিজের সামর্থ্যের ব্যাপারে অবগত, এবং তদতিরিক্ত চাওয়া মানেই অপরের দ্বারস্থ হওয়া। কিছু সংখ্যক মানুষ স্বনির্ভরতার সাথে মান-মর্যাদা প্রভৃতিকে সম্পৃক্ত বলে মনে করে, এবং তাদের কাছে অপরের সাহায্য প্রার্থনা করা অত্মমর্যাদা-হানিকারক। আত্মনির্ভরতা মানুষকে ও সমাজকে সৃজনশীল করে তোলে, কী ভাবে এবং কত সহজে তার চাহিদা পূরণ হবে, সে সব অন্বেষণ করার তাগিদ জোগায়।
কিন্তু দেশ এখন করোনার কবলে। এমতাবস্থায় আত্মনির্ভরতা কতটা প্রাসঙ্গিক তা দেখা দরকার। এই মুহুর্তে মানুষ চূড়ান্ত ভাবে পরনির্ভর। যার ঘরে খাবার নেই, তার কাছে খাবার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে; যার ওষুধ ফুরিয়ে গেছে, তার কাছে নির্দিষ্ট ওষুধ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে; যে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ছে, তাকে নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে; সরকার এবং অপরাপর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিও মানুষের হাতে ত্রাণ তুলে দিচ্ছে। এমন দুঃসময়ে একে অপরের পাশে দাঁড়াবে, এটাই তো কাম্য। অপরপক্ষে, যাদেরকে নিজের নিজের পায়ের উপর নির্ভর করেই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে, সেই পরিযায়ী শ্রমিকদের একাংশের আর ফেরা হয়ে উঠছে না, যাত্রাপথের মাঝেই তারা ঢলে পড়ছে মৃত্যুর কোলে। তাদের আত্মনির্ভরতা তাদেরই মৃত্যুর কারণ হচ্ছে। তাদের ভোটে গঠিত সরকার তাদেরই দায় ঝেড়ে ফেলে দিয়ে আত্মনির্ভরতার মহৎ বাণী প্রচারে ব্যস্ত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই সমস্ত ঘটনায় কতটা ব্যথিত, তা বোঝার কোনো উপায় আমাদের কাছে নেই, আমরা শুধু এটুকুই বলতে পারি যে তিনি অনতিরিক্ত একঘণ্টার বক্তৃতায় কম-বেশি বার পঁচিশেক ‘আত্মনির্ভর’ কথাটি উচ্চারণ করেছেন।
পরিশেষে বলার, আত্মনির্ভরতা আর স্বয়ং-সম্পূর্ণতা দুইটি ভিন্ন বিষয়। কোনো মানুষ, কোনো জাতি বা কোনো রাষ্ট্র আত্মনির্ভর (অর্থাৎ, self-dependent) হতেই পারে, কিন্তু তা কখনোই স্বয়ং-সম্পূর্ণ (অর্থাৎ, self-sufficing) হতে পারে না। সমগ্র বিশ্ব জুড়ে এমন এক ব্যবস্থা চলছে, যার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি, জাতি বা রাষ্ট্র লেনদেনের মাধ্যমেই বড় হয়, সমৃদ্ধ হয়। শিক্ষার লেনদেনের মাধ্যমে শিক্ষানবিসের মানসিক বিকাশ সাধিত হয়, কর্মক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে শ্রম ও দক্ষতা খরিদ করা হয় ও অর্থনৈতিক অগ্রসর ঘটে, প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ আদানপ্রানের মাধ্যমে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষিত হয়, ইত্যাদি। সুতরাং, বার পঁচিশেক ‘আত্মনির্ভরতা’ শুনে, সেটিকে ‘স্বয়ং-সম্পূর্ণতা’ ভেবে নেওয়ার কোনো কারণ নেই। কী ধরণের আত্মনির্ভরতা মঙ্গলদায়ক হবে তা মানুষ স্বাধীন বুদ্ধিতে বিচার করে তবেই প্রয়োগ করুক। এতে আপামর জনসাধারণের কল্যাণ সাধিত হবে।
কলমের আঁচড়ে
পৃথিবীর বুকে মেনে চলা কিছু বিস্ময়কর এবং ভয়ঙ্কর সত্কার-রীতি!

বিশ্বজিৎ দাস : কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত বলে গেছেন “জন্মিলে মরিতে হবে অমর কে কোথা কবে?” অর্থাৎ জন্মগ্রহণ করলে আমাদের মৃত্যু অনিবার্য। মানুষের মৃত্যুর পর সৎকার করা হয়। সভ্যতার প্রথম দিক থেকেই এই নিয়ম চলে আসছে। এই সৎকারের সময় টা খুবই কঠিন, বিশেষত নিকটজনের কাছে। সে সব আঁকড়ে থাকে, কারণ একবার ছেড়ে দিলে আর পাওয়া যাবে না। এই ভাবাবেগ থেকেই স্মৃতি রক্ষার ভাবনা শুরু। মৃতের ব্যবহৃত জিনিস রেখে দেওয়া, যেমন চুল কিছুটা কেটে যত্ন করে রেখে দেওয়া ছিল পুরনো প্রথা। অনেকে দাঁত সংরক্ষন করত। বুদ্ধের দাঁত কলকাতার জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে আজও।
কিন্তু পৃথিবীর প্রত্যেক জাতির মধ্যেই মৃত্যুর পর কিছু বিশেষ নিয়ম পালন করার রীতি আছে। কিছু নিয়ম বিজ্ঞানসম্মত আবার কিছু একেবারে অদ্ভুত। মৃতদেহ সত্কারের জন্য কেউ যেখানে মৃতদেহটি পুড়িয়ে ফেলেন, আবার কেউ বা মাটিতে কবর দেন। আবার কেউ বা সযত্নে সেটিকে কফিনজাত করেন। কিন্তু এসবের বাইরেও এমন অনেক রীতিনীতি আছে যেগুলি আমার আপনার স্বাভাবিক ভাবনা চিন্তার বাইরে।
সাধারণ মানুষের কাছে মৃত ব্যক্তিকে মাটিতে কবর দিয়ে রাখা বা আগ্নিদাহ করা পরিবেশগত কারণে মোটামুটি স্বাভাবিক মনে হলেও কিছু কিছু সংস্কৃতিতে মৃত ব্যক্তি সমাহিত করার পদ্ধতি অবাক করার মতো।
পৃথিবী জুড়ে চলা এই আশ্চর্য ও কিছুটা ভয়ঙ্কর মৃত্যু অনুষ্ঠান গুলি হল :
১. মমিফিকেশন :

এই ঘটনা আমার আপনার কিছুটা জানা। প্রাচীন মিশরের ফারাওদের মরদেহ মমি করে সমাহিত করা হতো। এই পদ্ধতিতে প্রথমে দেহের অভ্যন্তরীণ সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বের করা হয়। এরপরে দেহের সব আর্দ্রতা অপসারিত করা হয়। শেষে লম্বা আকৃতির লিনেন কাপড় দিয়ে দেহ মুড়ে ফেলা হয়।
তবে আধুনিক মমিফিকেশন পদ্ধতি আলাদা।বর্তমানে মৃতদেহ সংরক্ষণের জন্য কিছু রাসায়নিক তরল ভর্তি পাত্রে দেহ ডুবিয়ে রাখা হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এটি মৃতদেহ সৎকারের কোনো রীতি নয়; এটি মৃতদেহ সংরক্ষণ পদ্ধতি।
২. মৃতের পুনর্জাগরণ :

এই অদ্ভুত প্রথাটি পালন করা হয় মাদাগাস্কায়। প্রতি পাঁচ থেকে সাত বছর পর পর। তার নিকটাত্মীয়রা কবর খুঁড়ে মৃত ব্যক্তির দেহাবশেষ বের করে আনে। এরপর মৃত ব্যক্তিকে নতুন পোশাক পরানো হয় এবং পারিবারিক ভোজে তাকে বসিয়ে রাখা হয়।এদিন মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে গানের তালে তালে নাচতেও দেখা যায়। পারিবারিক পুনর্মিলন হিসেবে প্রথাটিকে দেখা হয়।
৩. এন্ডোক্যানিবালিজম (Endocannibalism) :

এই বিশেষ মৃত্যু অনুষ্ঠানটি দেখতে পাওয়া যায় আমাজন রেইন ফরেস্টের ইয়ানোমমি উপজাতি, পাপুয়া নিউ গিনির মেলানসিয়ানস উপজাতি এবং ব্রাজিলের ওয়ারীরা উপজাতির মধ্যে।এখানে একটি মৃতদেহকে বা দেহাংশকে ভক্ষণ করা হয়। তাদের বিশ্বাস এই প্রথার মধ্যে দিয়ে মৃত ব্যাক্তির আত্মা স্বর্গে যাবে।
এই জাতির মানুষেরা বিশ্বাস করেন, মৃত্যু কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়। উপরন্তু তারা ভাবেন যে, তাদের প্রতিদ্বন্দী গোষ্ঠী কোনো অশুভ আত্মাকে প্রেরণ করেছে। সেই কারণে এই ঘটনা রোধ করার জন্য তারা এই অনুষ্ঠানটি করে থাকেন। যাতে মৃত ব্যাক্তির আত্মা জীবিত থাকে এবং তার পরবর্তী প্রজন্মকে রক্ষা করতে পারে।
এই অনুষ্ঠানটি করার জন্য প্রথমে তারা মৃতদেহটিকে পাতা দিয়ে মুড়ে বাড়ি (যেখানে তিনি মারা গেছেন) থেকে অল্প দূরে জঙ্গলে রেখে আসেন। এর পর মোটামুটি ৩০ থেকে ৪৫ দিনের মাথায় সেই পঁচাগলে যাওয়া মৃতদেহ থেকে হাড় সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। এরপর কলা দিয়ে বানানো একধরণের সুপের মধ্যে মৃতদেহের ছাই মিশিয়ে গোষ্ঠীর সকলে সেটি পান করে। তবে এই নিয়ম শুধুমাত্র গোষ্ঠীর শিশু ও মহিলারা পালন করেন।
৪. তিব্বত বৌদ্ধ মহিমা কবর/ তিব্বতের আকাশ সৎকার (Tibetan Buddhist Celestial Burials or Sky burial) :

এই সৎকার অনুষ্ঠানটি তিব্বতি ঐতিহ্যের প্রতীক। এই অনুষ্ঠানে মৃতদেহকে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে পাহাড়ের মাথায় রেখে আসা হয় এবং পাখিদের (বিশেষত শিকারী পাখিদের) ওই দেহাংশ ভক্ষণ করতে দেওয়া হয়। অনেক সময় অক্ষত মৃতদেহও রেখে দেওয়া হয় এই পাখিদের খাদ্য হওয়ার জন্য।
বৌদ্ধ ধর্ম অনুসারে মৃতদেহকে খালি জাহাজ মনে করা হয় যা সংরক্ষনের কোনো দরকার নেই।মূলত, তিব্বতের কঠিন জলবায়ু ও পাথরে ভরা জমিতে কবর দেওয়া এক পক্ষে অসম্ভব।৫. সাসপেন্ড কবরস্থান (Suspended Burials) : এই সৎকার অনুষ্ঠানটি প্রাচীন চীন বংশের মধ্যে দেখা যায়। এখানে তারা মৃতদেহকে কফিনে পুড়ে উঁচু পাহাড়ের গায়ে অবস্থিত শিলার উপর ঝুলিয়ে রেখে দেয়। সাধারণের বিশ্বাস, মৃতদেহকে আকাশের কাছাকাছি রাখা উচিত যাতে তারা বন্য প্রাণীদের নাগালের বাইরে এবং ভগবানের নাগালের মধ্যে বা কাছাকাছি থাকতে পারে।
৫. সতী :

উপযুক্ত কারণেই হিন্দু ধর্মে সতীদাহ প্রথার প্রচলন বর্তমানে নিষিদ্ধ। তবুও একটা সময়ে এই নিষ্ঠুর ও অমানবিক সৎকার হিন্দু ধর্মের এক সনাতনী ঐতিহ্য হিসাবেই মানা হত। এই রীতি অনুযায়ী, মৃত ব্যাক্তির স্ত্রী কে বধূবেশে সাজিয়ে একই চিতায় মৃত্যু বরণ করতে হত। সেই সময় দাবি করা হত, সতীদাহ প্রথার মাধ্যমে মৃত স্ত্রী সতিরূপে স্বর্গলাভ করবে।
৬. ভাইকিং ফিউনারেল (The Viking Funeral) :

এটি একটি অন্যতম নৃশংস সৎকার অনুষ্ঠান। এই রীতি অনুযায়ী মৃতদেহকে একটি অস্থায়ী কবরে দশ দিনের জন্য রাখা হত। পাশাপাশি চলত মৃতের জন্য নতুন জামাকাপড় তৈরির কাজ। অন্যদিকে একজন ক্রীতদাসীকে বেছে নেওয়া হত, যে ওই মৃত মানুষটির পরবর্তী জীবনের সঙ্গিনী হবে। এরপর সেই মেয়েটি ওই গ্রামের সকলের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতো। তাদের মতে এই বর্বরতায় নাকি ছিল মৃতব্যাক্তির প্রতি প্রেম নিবেদন। তারপর ওই দাসীর গলায় ফাঁস দিয়ে এবং সবশেষে ছুরি মেরে হত্যা করা হতো।
এরপর একটি কাঠের জাহাজে মৃত ব্যাক্তির সাথে তাকেও রেখে দিয়ে অগ্নি সংযোগ করা হত।
৭. আঙুলের আবৃততা (Ritual Finger Amputation) :

এই মৃতদেহ সৎকারের নিয়মটি পাপুয়া নিউ গিনির দানি জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রচলিত।
এই নিয়ম অনুযায়ী বাড়ির কোনো প্রিয় ব্যক্তি মারা গেলে তার সঙ্গে সম্বন্ধিত মহিলা ও শিশুরা তাদের আঙুলের কিছু অংশ কেটে ফেলত। এরপর কাদা ও ছাই মুখে মেখে মৃতব্যক্তির জন্য শোক প্রকাশ করত।
৮. টোটেম পোলস (Mortuary Totem Poles) :

স্থানীয় সভ্যতার বিভিন্ন গল্প তুলে ধরার জন্য টোটেম পোল তৈরি করা হয়। হায়দা উপজাতির মধ্যে এই রীতি দেখতে পাওয়া যায়। এই রীতি অনুযায়ী মৃতব্যাক্তির শরীরকে পেটানো হবে যতক্ষন না এটি একটি ছোট বাক্সে এঁটে যায়।এরপর এই বাক্সটি একটি টোটেম পোল এর উপর রেখে মৃত ব্যাক্তির বাড়ির সামনে রেখে আসা হয়।
৯. বারিড ইন ফ্যান্টাসি কফিন (Buried in a fantasy Coffin) :

এই রীতি অনুযায়ী মৃতদেহকে এমন একটি কফিনে রাখা হয় যেটি তার জীবনকে অথবা পেশাকে উপস্থাপনা করে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো বিমান চালক কে বিমানরূপী কফিনে, কোনো জেলেকে মাছরূপী কফিনে আবার কোনো ধনী ব্যাবসায়ীকে একটি দামি গাড়ীরূপী কফিনে রাখা হয়।
১০. অন্ধ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া (Blindfolded funeral) :
এই মৃতদেহ সৎকারের রীতি অনুযায়ী মৃতদেহের চোখ বেঁধে তাকে বাড়ির মুখ্য দরজার সামনে রেখে দেওয়া হয়। এটি দেখা যায় উত্তর পশ্চিম ফিলিপিনেসে।
এছাড়াও সারা পৃথিবী জুড়ে আরও নানান ধরনের অদ্ভুত এবং ভয়ংকর সৎকার অনুষ্ঠান দেখতে পাওয়া যায়।