কলমের আঁচড়ে
আমরা ঈশ্বর দেখিনি, সচিন কে দেখেছি…।
সৌমেন্দু বাগ- 1. 1999, জানুয়ারি। তবু চেন্নাইয়ের মাটি ঝলসে যাচ্ছে। সেইসঙ্গে পেসের আগুনে ঝলসে গেছে 271 তাড়া করতে গিয়ে ভারতের মহারথী ব্যাটিং লাইন আপ। পিঠে একটা চিনচিনে ব্যথা নিয়ে এক পাঁচ ফুটের সৈনিক তার সহযোদ্ধাদের নিয়ে লড়তে নেমেছেন জোড়া ফলা আক্রম – ইউনিস আর ভেলকিবাজ মুস্তাক এর বিরুদ্ধে।ওদিক থেকে পেস বলের মতোই ছুটে আসছে বাক্য – ‘ বল নজর আয়ী? ‘ না! প্রত্যুত্তরে কোনো শব্দ নয়, পরের ইয়র্কার টাকে ফ্লিক করে দেখিয়ে দিলেন ডিপ ফাইন লেগের দিক। 82-5। পিঠের ব্যথা টা চাগার দিল, দাঁড়িয়ে থাকা যাচ্ছে না, প্রত্যেকটা বল এক একটা ওভার এর সমতুল্য লাগছে। তবু না, এইটুকু ব্যথায় তোমার ভেঙে পড়া মানায় না হে যুগের যাত্রী, বীর সৈনিক। নয়ন মঙ্গিয়া , সুনীল যোশী কে নিয়ে 254 তে পৌঁছে দিয়েছেন দলকে, কিন্তু ব্যথা যে আর বাধা মানছে না, উপায় না দেখে মুস্তাক কে আক্রমন করতে গেলেন। দুসরা টা টপ – এজড হয়ে গেলো। পিঠে অসহনীয় ব্যথা আর ১৩৬ রান নিয়ে প্যাভিলিয়নে যখন উঠছেন, সুদূর মফঃস্বলের ছেলেটি, যে আগের ইন্টারভিউ টায় পাশ করতে পারেনি, সে আবার প্রস্তুতি শুরু করে দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে।
2.সফলতার জন্য শুধু উদ্যম নয়, স্মার্ট প্রস্তুতি দরকার। 2003 বিশ্বকাপ, তখনও ডিজিটাল মাধ্যমে প্রতিপক্ষের বোলারদের ভুল- ত্রুটি জানার উপায় আসেনি, এদিকে আবার আঙ্গুলের যা অবস্থা তাতে নেট প্রাকটিস করলে বিপদ আরো বাড়বে। তখন তিনি যে স্টাইল চালু করেন, আজ প্রযুক্তির যুগেও কোহলি থেকে স্মিথ সবাই চর্চা করেন। থ্রোয়িং ডাউন। দশ গজ দুর থেকে কেও ক্রমাগত তাঁকে বল ছুড়বে। আর তিনি ম্যাচে ব্যাট করার মত অখন্ড মনোযোগ দিয়ে খেলে যাবেন।ওই যে বল নক করতে করতে তার অনুরণন মাথার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে ঢ্যা – ক ঢ্যা- ক আওয়াজ টা, টা ব্রেইন মেমোরিতে থেকে যাবে।ওই আওয়াজ টা সলিডিটির সরব সিলমোহর যে সব কিছু চলছে ব্যাটের মাঝখান দিয়ে।তার মানে তিনি প্রাকটিস থেকে পাওয়া চেতনার মানসিক তরঙ্গ মাথায় লক করে দিতেন। সেটা বার করে আনতেন ব্যাটিং এর সময়। কাহিনীর উপপাদ্য, তুমি যেই কাজ ই করো, সেই কাজে পারফেক্ট হতে গেলে তোমারসচেতন অবচেতন মন দুটো সমান তৈরি রাখতে হবে। এত বড়ো জীবনবোধ বোধ হয় আর কেও দিতে পারেনি।
3.আঙুল – কনুই – কাঁধ একের পর এক সার্জারীতে অনিয়মিত হয়ে পড়া, 2007 বিশ্বকাপের অন্ধকার অধ্যায়, দলের মধ্যে কুয়াশাচ্ছন পরিবেশ, খবরের কাগজে শিরোনাম আসছে ‘ এন্ডুলকার’ – তিরিশ গজের বৃত্ত টা যেনো ছোট হয়ে আসছে প্রতিদিন। আর তখনই লী এর151 কিমি/ঘণ্টা বেগের বলটা সিডনির পিচ চিরে ছুটে যায় স্ট্রেটের বাউন্ডারীর দিকে। নিজেকে বারবার প্রমাণ করার কত টা ইচ্ছে থাকলে বামকাঁধে চোট নিয়েও লী – ব্রাকেন দের মোকাবিলা করতে নেমে যান আর হাসতে হাসতে ৯১ করে যান। ওই যে মাথায় তেরঙ্গা নিয়ে দৃঢ় চোয়ালে যখন এগিয়ে যান প্রতিপক্ষের দিকে, তিনি তো তখন শুধু ক্রিকেটার থাকেন না,তিনি হয়ে ওঠেন সমস্ত হেরে যাওয়া মানুষের আশা, উদ্যমের প্রতীক। তারা হাল ছাড়বে না, কারণ তাদের সচিন ছাড়েনি। তারা বিশ্বাস করে অদম্য প্রত্যয়, অধ্যবসয় ,সমর্পণ থাকলে প্রতিকুলতম রাস্তাও অতিক্রম করা যায়, কারণ তাদের সচিন তা করে দেখিয়েছে। তিনিআধুনিক ভারতের মন্দির মসজিদ গির্জা র ভিতরে থাকা নিরাকার প্রাণবায়ু , সেই প্রাণবায়ু আমাদের ছুয়ে গেছে, স্বাধীনোত্তর এক জাতির বুকে দাঁড়িয়ে একজন সচিনকে সবুজ গালিচা দিয়ে হেঁটে যেতে দেখেছি আমরা।সচিন আসলে আম ভারতীয়র মনে ক্রিকেটীয় সত্তার বাইরে ভার্চুয়াল তাজমহল। যা চোখের সামনে চব্বিশ বছর ধরে সিমেন্ট – বালি – লোহা – সুরকি আর মার্বেল খোদায় করে নির্মিত হয়েছে।সবাই তার ভালোবাসার শরিক । একদিকে দেশটা তার প্রয়ান্ধকার অর্থনৈতিক মনন কে ঝেড়ে ফেলে উদারীকরণের রাস্তায় বিশ্বজনীন হচ্ছিল। আর একদিকে সচিন নিজের সাধনা ও সিদ্ধির জোরে তার মাহাত্ম্য বিশ্বজনীন করছিলেন। অদ্ভুতভাবে সচিন আর আধুনিক ভারতের উত্থান দুটো রুদ্ধশ্বাস এলিভেটর যেনো একটা টেনেছে আরেকটাকে। সচিন দেখিয়েছেন প্রতিভার সাথে আধুনিকতা। ভারত একই সময়ে দেখাচ্ছে ঐতিহ্যের সাথে শিক্ষা বিজ্ঞান ও অর্থনীতির কোলাজ। ‘ A revolution of Indian cricket whose genius changed the future of an entire nation.’ শুধুই কি ক্রিকেট খেলেছেন, শুধুই কি জীবনবোধ শিখিয়েছেন চব্বিশ বছর ধরে? প্রাক স্বাধীনতা বা উত্তর স্বাধীনতা যুগে বারবার বুদ্ধ – রাম – আল্লাহ – খ্রিস্ট তে ভেঙে যাওয়া জাতিকে এক ছাদের তলায় এনে ‘ সচিন! সচিন! ‘ নামক মন্ত্রে দীক্ষিত করেননি? সেঞ্চুরিয়ানে যেদিন পাকিস্তানি বোলিং অ্যাটাক কে পিটিয়ে ছাতু করছেন, বাংলার কোনো অখ্যাত গ্রামের দালান বাড়িতে ভিড় করত গোটা গ্রাম, স্তব্ধ হয়ে যেত মহানগরীর ট্রাফিক। এই আসমুদ্র হিমাচলকে আমার মতে এক সূত্রে বাঁধার জন্য আমার মতে ‘ দেশপ্রেম বাড়ান! দেশপ্রেম বাড়ান! ‘ জাতীয় স্লোগান লাগে না। এই পাঁচ ফুটের মানুষটির ক্রিজে দাঁড়ানোই যথেষ্ট। 2008 এর ইংল্যান্ড সিরিজ চলাকালীন ওরকম ভয়াবহ 26/11 ঘটনার পর যখন ইংল্যান্ড না খেলেই ফিরে যাচ্ছে, ইন্দো – পাক ক্রিকেটীয় সম্পর্কের প্রায় ইতি, তিনি জানতেন শুধুমাত্র ক্রিকেট ই পারে এই দেশ কে আবার মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতে। তাই তিনি লড়ে যান দেশবাসীর হয়ে, আর সেই লড়াইয়ের সাফল্য উৎসর্গ করেন দেশবাসীকে।কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী অবধি যে ‘ সচিন, সচিন! ইন্ডিয়া! ইন্ডিয়া! ‘ শব্দব্রহ্ম এ কেঁপে উঠতো, তাই ছিল আমাদের দেশপ্রেম। নিজেই লিখেছেন, ” Indians love cricket and if, for just a minute or two, a victory in Chennai could lift their mood after everything that happened, I would feel humbled”
সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরি করে অনেকেই হইতো সচিন নামক এভারেস্ট পেরিয়ে যাবেন, কিন্তু ভারতের এভারেস্ট হওয়ার জন্য যে শুধু ক্রিকেট নয়, সচিনের প্রতিভার পাশে একটু একটু করে জমা ঐশ্বরিক বোধ টা নির্মাণ করেছে। ক্রিকেট দেবতার মন্দিরে লেখা হয় ভারতের জয়গাথা, কত খেলোয়াড় আসবেন, যাবেন, শুধু একটা ‘সচিন সচিন !’ ওয়েভ থেকে যাবে ভারতের পূজার মন্ত্র হয়ে। রান উইকেটের শুকনো উপাসনা গৃহে এর থেকে বড়ো ঈশ্বর দর্শন হতে পারেনা… ” পতন অভ্যুদয় বন্ধুর পন্থা, যুগ যুগ ধাবিত যাত্রী হে চিরসারথি , তব রথচক্রে মুখরিত পথ দিনরাত্রি।”কৃতজ্ঞতা স্বীকার: ‘ Playing It My Way’ by Sachin Tendulkar
কলমের আঁচড়ে
পৃথিবীর বুকে মেনে চলা কিছু বিস্ময়কর এবং ভয়ঙ্কর সত্কার-রীতি!
বিশ্বজিৎ দাস : কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত বলে গেছেন “জন্মিলে মরিতে হবে অমর কে কোথা কবে?” অর্থাৎ জন্মগ্রহণ করলে আমাদের মৃত্যু অনিবার্য। মানুষের মৃত্যুর পর সৎকার করা হয়। সভ্যতার প্রথম দিক থেকেই এই নিয়ম চলে আসছে। এই সৎকারের সময় টা খুবই কঠিন, বিশেষত নিকটজনের কাছে। সে সব আঁকড়ে থাকে, কারণ একবার ছেড়ে দিলে আর পাওয়া যাবে না। এই ভাবাবেগ থেকেই স্মৃতি রক্ষার ভাবনা শুরু। মৃতের ব্যবহৃত জিনিস রেখে দেওয়া, যেমন চুল কিছুটা কেটে যত্ন করে রেখে দেওয়া ছিল পুরনো প্রথা। অনেকে দাঁত সংরক্ষন করত। বুদ্ধের দাঁত কলকাতার জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে আজও।
কিন্তু পৃথিবীর প্রত্যেক জাতির মধ্যেই মৃত্যুর পর কিছু বিশেষ নিয়ম পালন করার রীতি আছে। কিছু নিয়ম বিজ্ঞানসম্মত আবার কিছু একেবারে অদ্ভুত। মৃতদেহ সত্কারের জন্য কেউ যেখানে মৃতদেহটি পুড়িয়ে ফেলেন, আবার কেউ বা মাটিতে কবর দেন। আবার কেউ বা সযত্নে সেটিকে কফিনজাত করেন। কিন্তু এসবের বাইরেও এমন অনেক রীতিনীতি আছে যেগুলি আমার আপনার স্বাভাবিক ভাবনা চিন্তার বাইরে।
সাধারণ মানুষের কাছে মৃত ব্যক্তিকে মাটিতে কবর দিয়ে রাখা বা আগ্নিদাহ করা পরিবেশগত কারণে মোটামুটি স্বাভাবিক মনে হলেও কিছু কিছু সংস্কৃতিতে মৃত ব্যক্তি সমাহিত করার পদ্ধতি অবাক করার মতো।
পৃথিবী জুড়ে চলা এই আশ্চর্য ও কিছুটা ভয়ঙ্কর মৃত্যু অনুষ্ঠান গুলি হল :
১. মমিফিকেশন :
এই ঘটনা আমার আপনার কিছুটা জানা। প্রাচীন মিশরের ফারাওদের মরদেহ মমি করে সমাহিত করা হতো। এই পদ্ধতিতে প্রথমে দেহের অভ্যন্তরীণ সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বের করা হয়। এরপরে দেহের সব আর্দ্রতা অপসারিত করা হয়। শেষে লম্বা আকৃতির লিনেন কাপড় দিয়ে দেহ মুড়ে ফেলা হয়।
তবে আধুনিক মমিফিকেশন পদ্ধতি আলাদা।বর্তমানে মৃতদেহ সংরক্ষণের জন্য কিছু রাসায়নিক তরল ভর্তি পাত্রে দেহ ডুবিয়ে রাখা হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এটি মৃতদেহ সৎকারের কোনো রীতি নয়; এটি মৃতদেহ সংরক্ষণ পদ্ধতি।
২. মৃতের পুনর্জাগরণ :
এই অদ্ভুত প্রথাটি পালন করা হয় মাদাগাস্কায়। প্রতি পাঁচ থেকে সাত বছর পর পর। তার নিকটাত্মীয়রা কবর খুঁড়ে মৃত ব্যক্তির দেহাবশেষ বের করে আনে। এরপর মৃত ব্যক্তিকে নতুন পোশাক পরানো হয় এবং পারিবারিক ভোজে তাকে বসিয়ে রাখা হয়।এদিন মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে গানের তালে তালে নাচতেও দেখা যায়। পারিবারিক পুনর্মিলন হিসেবে প্রথাটিকে দেখা হয়।
৩. এন্ডোক্যানিবালিজম (Endocannibalism) :
এই বিশেষ মৃত্যু অনুষ্ঠানটি দেখতে পাওয়া যায় আমাজন রেইন ফরেস্টের ইয়ানোমমি উপজাতি, পাপুয়া নিউ গিনির মেলানসিয়ানস উপজাতি এবং ব্রাজিলের ওয়ারীরা উপজাতির মধ্যে।এখানে একটি মৃতদেহকে বা দেহাংশকে ভক্ষণ করা হয়। তাদের বিশ্বাস এই প্রথার মধ্যে দিয়ে মৃত ব্যাক্তির আত্মা স্বর্গে যাবে।
এই জাতির মানুষেরা বিশ্বাস করেন, মৃত্যু কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়। উপরন্তু তারা ভাবেন যে, তাদের প্রতিদ্বন্দী গোষ্ঠী কোনো অশুভ আত্মাকে প্রেরণ করেছে। সেই কারণে এই ঘটনা রোধ করার জন্য তারা এই অনুষ্ঠানটি করে থাকেন। যাতে মৃত ব্যাক্তির আত্মা জীবিত থাকে এবং তার পরবর্তী প্রজন্মকে রক্ষা করতে পারে।
এই অনুষ্ঠানটি করার জন্য প্রথমে তারা মৃতদেহটিকে পাতা দিয়ে মুড়ে বাড়ি (যেখানে তিনি মারা গেছেন) থেকে অল্প দূরে জঙ্গলে রেখে আসেন। এর পর মোটামুটি ৩০ থেকে ৪৫ দিনের মাথায় সেই পঁচাগলে যাওয়া মৃতদেহ থেকে হাড় সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। এরপর কলা দিয়ে বানানো একধরণের সুপের মধ্যে মৃতদেহের ছাই মিশিয়ে গোষ্ঠীর সকলে সেটি পান করে। তবে এই নিয়ম শুধুমাত্র গোষ্ঠীর শিশু ও মহিলারা পালন করেন।
৪. তিব্বত বৌদ্ধ মহিমা কবর/ তিব্বতের আকাশ সৎকার (Tibetan Buddhist Celestial Burials or Sky burial) :
এই সৎকার অনুষ্ঠানটি তিব্বতি ঐতিহ্যের প্রতীক। এই অনুষ্ঠানে মৃতদেহকে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে পাহাড়ের মাথায় রেখে আসা হয় এবং পাখিদের (বিশেষত শিকারী পাখিদের) ওই দেহাংশ ভক্ষণ করতে দেওয়া হয়। অনেক সময় অক্ষত মৃতদেহও রেখে দেওয়া হয় এই পাখিদের খাদ্য হওয়ার জন্য।
বৌদ্ধ ধর্ম অনুসারে মৃতদেহকে খালি জাহাজ মনে করা হয় যা সংরক্ষনের কোনো দরকার নেই।মূলত, তিব্বতের কঠিন জলবায়ু ও পাথরে ভরা জমিতে কবর দেওয়া এক পক্ষে অসম্ভব।৫. সাসপেন্ড কবরস্থান (Suspended Burials) : এই সৎকার অনুষ্ঠানটি প্রাচীন চীন বংশের মধ্যে দেখা যায়। এখানে তারা মৃতদেহকে কফিনে পুড়ে উঁচু পাহাড়ের গায়ে অবস্থিত শিলার উপর ঝুলিয়ে রেখে দেয়। সাধারণের বিশ্বাস, মৃতদেহকে আকাশের কাছাকাছি রাখা উচিত যাতে তারা বন্য প্রাণীদের নাগালের বাইরে এবং ভগবানের নাগালের মধ্যে বা কাছাকাছি থাকতে পারে।
৫. সতী :
উপযুক্ত কারণেই হিন্দু ধর্মে সতীদাহ প্রথার প্রচলন বর্তমানে নিষিদ্ধ। তবুও একটা সময়ে এই নিষ্ঠুর ও অমানবিক সৎকার হিন্দু ধর্মের এক সনাতনী ঐতিহ্য হিসাবেই মানা হত। এই রীতি অনুযায়ী, মৃত ব্যাক্তির স্ত্রী কে বধূবেশে সাজিয়ে একই চিতায় মৃত্যু বরণ করতে হত। সেই সময় দাবি করা হত, সতীদাহ প্রথার মাধ্যমে মৃত স্ত্রী সতিরূপে স্বর্গলাভ করবে।
৬. ভাইকিং ফিউনারেল (The Viking Funeral) :
এটি একটি অন্যতম নৃশংস সৎকার অনুষ্ঠান। এই রীতি অনুযায়ী মৃতদেহকে একটি অস্থায়ী কবরে দশ দিনের জন্য রাখা হত। পাশাপাশি চলত মৃতের জন্য নতুন জামাকাপড় তৈরির কাজ। অন্যদিকে একজন ক্রীতদাসীকে বেছে নেওয়া হত, যে ওই মৃত মানুষটির পরবর্তী জীবনের সঙ্গিনী হবে। এরপর সেই মেয়েটি ওই গ্রামের সকলের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতো। তাদের মতে এই বর্বরতায় নাকি ছিল মৃতব্যাক্তির প্রতি প্রেম নিবেদন। তারপর ওই দাসীর গলায় ফাঁস দিয়ে এবং সবশেষে ছুরি মেরে হত্যা করা হতো।
এরপর একটি কাঠের জাহাজে মৃত ব্যাক্তির সাথে তাকেও রেখে দিয়ে অগ্নি সংযোগ করা হত।
৭. আঙুলের আবৃততা (Ritual Finger Amputation) :
এই মৃতদেহ সৎকারের নিয়মটি পাপুয়া নিউ গিনির দানি জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রচলিত।
এই নিয়ম অনুযায়ী বাড়ির কোনো প্রিয় ব্যক্তি মারা গেলে তার সঙ্গে সম্বন্ধিত মহিলা ও শিশুরা তাদের আঙুলের কিছু অংশ কেটে ফেলত। এরপর কাদা ও ছাই মুখে মেখে মৃতব্যক্তির জন্য শোক প্রকাশ করত।
৮. টোটেম পোলস (Mortuary Totem Poles) :
স্থানীয় সভ্যতার বিভিন্ন গল্প তুলে ধরার জন্য টোটেম পোল তৈরি করা হয়। হায়দা উপজাতির মধ্যে এই রীতি দেখতে পাওয়া যায়। এই রীতি অনুযায়ী মৃতব্যাক্তির শরীরকে পেটানো হবে যতক্ষন না এটি একটি ছোট বাক্সে এঁটে যায়।এরপর এই বাক্সটি একটি টোটেম পোল এর উপর রেখে মৃত ব্যাক্তির বাড়ির সামনে রেখে আসা হয়।
৯. বারিড ইন ফ্যান্টাসি কফিন (Buried in a fantasy Coffin) :
এই রীতি অনুযায়ী মৃতদেহকে এমন একটি কফিনে রাখা হয় যেটি তার জীবনকে অথবা পেশাকে উপস্থাপনা করে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো বিমান চালক কে বিমানরূপী কফিনে, কোনো জেলেকে মাছরূপী কফিনে আবার কোনো ধনী ব্যাবসায়ীকে একটি দামি গাড়ীরূপী কফিনে রাখা হয়।
১০. অন্ধ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া (Blindfolded funeral) :
এই মৃতদেহ সৎকারের রীতি অনুযায়ী মৃতদেহের চোখ বেঁধে তাকে বাড়ির মুখ্য দরজার সামনে রেখে দেওয়া হয়। এটি দেখা যায় উত্তর পশ্চিম ফিলিপিনেসে।
এছাড়াও সারা পৃথিবী জুড়ে আরও নানান ধরনের অদ্ভুত এবং ভয়ংকর সৎকার অনুষ্ঠান দেখতে পাওয়া যায়।