Connect with us

রিভিউ

মুভি রিভিউ : চিপ্পা, এক দশ বছরের ম্যাজিশিয়ানের গল্প।

Published

on

সৌমেন্দু বাগ : রাত। কারোর কাছে মায়াবী, কারোর কাছে রোমান্টিক, কারোর কাছে ক্লান্তির আরেক নাম। রাত আমাদের স্বপ্ন দেখায়। স্বপ্নের কোনো মানে থাকে? সারাদিন যুক্তি, কারণ, ফলাফল খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত মনরাত পরে এলে আর নিয়ম মানতে চায় না। তার চায়না কোনো পাসপোর্ট , কলকাতা থেকে প্যারিস যাওয়া যায় চাইলেই। সেখানে তার বন্ধু থাকে। ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে সে চিঠি লিখবে আমার জন্য। আমি তার জন্য সোণপাপরি নিয়ে যাবো।

বাস্তবের রূঢ়তার ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া এই স্বপ্নগুলোক ফিরিয়ে নিয়ে এলেন সফদার রহমান তার প্রথম ছবি চিপ্পা তে। ২৯ সে অক্টোবর , ২০১৯ এ মুক্তি পেলেও যথারীতি হারিয়ে গিয়েছিল। নেটফ্লিক্স এর সৌজন্ন্যে ছবিটি আরো বেশি দর্শকের কাছে পৌঁছতে পারবে । আর পৌঁছনও দরকার।

চিপ্পা (সানি পাওয়ার) ,১০ বছরের জন্মদিনের রাতে বেরিয়ে পড়ে তার বাবার দেওয়া একটা চিঠি হাতে, জন্মদিন পালন করতে আর কোনো উর্দু পড়তে জানা লোকের খোঁজে যে তার বাবার ওই চিঠিটা পরে দেবে। আর এই এক রাতেই সে আবিষ্কার করে কলকাতা শহরের আর শহরের মানুষের রাত। এই কলকাতা শহর নাতো ভিক্টরিয়া মেমোরিয়াল বা পার্ক স্ট্রিটের, কিংবা দুর্গাপূজা বা ক্রিকেট বা ময়দানের প্রেমের। এই শহর সেই লোকেদের ‘কালকাত্তা’ শহর যারা একটু ভালো জীবনের খোঁজে আশ্রয় নেয় শহরের বুকে। যে শহর বয়ে চলে চা-ওয়ালা, পেপারওয়ালা, ট্যাক্সি ড্রাইভার,ব্যান্ড ওয়ালা ,পোস্টম্যান, হিজরে দের খাটনি তে যাতে আমাদের সিটি অফ জয় হাসতে পারে, গিটার বাজিয়ে প্রেম করতে পারে, কবিতা লিখতে পারে উন্নয়ন নিয়ে।

চিপ্পা রহমান সাহেবের তাঁর প্রিয় শহরের প্রতি উদ্দেশ্য করে লেখা একটা প্রেম পত্র যে চিঠিতে তাঁর প্রেম বর্ণনা করা উদ্দেশ্য নয়, উদ্দেশ্য তাঁর গল্পের মধ্যে দিয়ে সেই প্রেম কে ফুটিয়ে তোলা।দেড় ঘন্টার এই ছবি ছোট চিপ্পার কলকাতা ভ্রমন কাহিনী যেখানে তাঁর সাথে দেখা অনেক অজানা মানুষের যারা শহরের রাতকে জীবন্ত রাখে।এই মানুষ গুলো কেও কাউকে চেনে না, কেও হয়তো চা ওয়ালা কেও হয়তোমার্সিডিজ চালানো যুবক। কিন্ত এক অদৃশ্য সূত্রে একে অপরের জীবনকে তারা ছুঁয়ে ফেলে, সেই সুতোর নাম চিপ্পা। যে আসলে ম্যাজিক জানে , বয়স কমিয়ে দেওয়ার ম্যাজিক। স্বপ্ন দেখতে শেখানোর ম্যাজিক। সেই ছোটবেলার মতো ভয় পাওয়ানোর ম্যাজিক। আর ম্যাজিক শেষে একটা টফি, যেখানে অদ্ভুত এক সুন্দর স্বাদ থাকে।

চিপ্পার এই ম্যাজিক কে জীবন্ত করেছে রামানুজ দত্তের ক্যামেরা এবং Cyrille de Haes এর সংগীত। প্রত্যেক টা ফ্রেম যেন এক -এক টা ছবি। একটা দৃশ্য আছে যেখানে চিপ্পা কাচের জানলা দিয়ে রাস্তায়বৃষ্টি দেখবে, আর জমা জলে কল্পনা করবে তার পালতোলা নৌবহর ভেসে চলেছে , কিন্তু এক সাইকেলওয়ালা সেই নৌবহর ভেঙে এগিয়ে যাবে।

আর সেইসঙ্গে গানগুলোর ব্যবহার। গানগুলো সবই চিপ্পা তার যাত্রাপথে রেডিও কিংবা সেলফোনে শুনতে পাবে আর তাঁর যাত্রার বর্ণনা গানগুলোই আমাদের করে দিয়েছে। এন্ডিং ক্রেডিটের গান টা শোনার মতো।যাকে নিয়ে পুরো ছবি তার কথা না বললে কি করে হয়? সানি পাওয়ার। ভারতীয় সিনেমার জ্বলন্ত ভবিষ্যত। ইতিমধ্যে দেব প্যাটেল এর কাঁধে চরে অস্কার মঞ্চ ঘুরে আসা হয়ে গেছে। অতীশয়োক্তি না করেই বলি এই মুহূর্তের বলিউডের যেকোনো বোরো মাপের অভিনেতার চোখে চোখ রেখে দাঁড়াতে পারবে।আর শুধু সানি নয়, সানির চোখ দুটোও আলাদা একটা চরিত্র মনে হয় যেন। আর এই রাত-যাপনে চিপ্পার সঙ্গী হিসেবে যারা আবির্ভুত হয়েছেন( সুমিত ঠাকুর, চন্দন রায় সান্যাল, গৌতম সরকার প্রমুখ) তাদের কথায় বা ভুলি কিভাবে?

রূপকথা হলেও রহমান সাহেব আমাদের প্রজন্মের সবথেকে বড় একটা সমস্যার কথা বলে দিয়েছেন- ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিস্মৃতি। দেশের সবথেকে সস্তায় বিরিয়ানি পাওয়া শহরে একজন উর্দু জানা মানুষ পাওয়া যায়না। প্রাচীন ভাষাটার মতোই আমরাও নিজেদের হারিয়ে ফেলছি গ্লোবলাইজড হওয়ার চক্করে।

এই সমস্ত সমস্যার সঙ্গে সারাদিন লড়াই করতে করতে ক্লান্ত যোদ্ধা যখন রাতের তারার দিকে তাকায়, তার সাথে দেখা হয় চিপ্পার। যার চোখে আমরা খুঁজে পায় আমাদের সেই ফেলে আসা ছোটবেলা যখন আমরা স্বপ্ন দেখতাম বড়ো হয়ে ফুটবলার হব, কিংবা বাসের কন্ডাক্টরের হয়ে ওই দরজার দাঁড়িয়ে হু হু হওয়ায় চুল ওড়াবো। আসলে চিপ্পা কোনো ১০ বছরের ছেলে নয়, চিপ্পা আমাদের মনের যাঁতাকলে চাপা পড়া একটা জীবন যা আমাদের ভালোবাসতে শেখায়, আমাদের মনে করায় এই দেশ- কাল-বর্ডার অতিক্রম করে আমরা আসলে তা যা আমাদের ভাগ করে নেওয়া সংস্কৃতি আর ইতিহাস আমাদের বানিয়েছে। আর ইতিহাস? সে তো রুশদি বলেই গেছেন, ‘despite of everything, acts of love.’

রিভিউ

মন্ত্রমুগ্ধ সঙ্গীতের এই বান্দিশ। ওয়েব সিরিজ রিভিউ : বান্ডিশ বান্ডিত্স

Published

on

বিপাশা দাস : পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠতম জীব হলো গিয়ে মানব। শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী হওয়ার সাথে সাথে বিভিন্ন প্রকার গুণের ও অংশীদার তারা। সঙ্গীত যার মধ্যে একটি, লক্ষ্য করে দেখবেন নিত্যদিনের প্রত্যেকটি কর্মের মধ্যে আপনি সুরের আশ্চর্য মেলবন্ধন খুঁজে পাবেন। এই আশ্চর্য মেলবন্ধন কে কাজে লাগিয়ে পরিচালক অঙ্কিত তিওয়ারি বান্ডিশ বান্ডিত্স নামক একটি ওয়েব সিরিজ আমাজন প্রাইম এরপর্দায় নিয়ে এলেন।

গুরুর প্রতি শিষ্যের অপার ভক্তি, সঙ্গীতের প্রতি অনবদ্য প্রেম একজন নিষ্ঠাবান শিষ্যের পরিচয়। পুরাকালের কাহিনী তো সবার কাছে জ্ঞাত, গুরুদেব দ্রোণাচার্য একলব্য এর আঙ্গুল গুরুদক্ষিণা হিবেসে চেয়ে গুরুভক্তির নিদর্শন স্বরূপ অক্ষত রাখেন। তেমনি এই ছবিতে রাধে তার টাকুরদা পণ্ডিত রাধেমোহনকে নিজের গুরুভক্তি এবং প্রেমের নিদর্শন কঠোর পরিশ্রমের সাথে দিয়েছে।

এবার যদি সঙ্গীতের ব্যাখ্যা চান তাহলে বলবো যথাযথ তার কোনো ব্যাখ্যা হয় না। ইতিহাসের দিকে নজর দিলে বুঝতে পারবেন সঙ্গীতের মহিমা কতটা ব্যাপ্ত। আকবরের নবরত্ন অলংকৃত তানসেন নিজের সঙ্গীতেরদ্বারা বৃষ্টি নামাতে পারতেন, ক্ষিপ্ত হাতিকে শান্ত করার ক্ষমতা ও তার গানের দ্বারা ফুটে ওঠে। তবে এই ওয়েব সিরিজের শেষে এমনটাই পরিচয় পেয়ে থাকবেন। ইন্ডিয়ান ক্লাসিক্যাল গানের সঙ্গেপপ মিউজিক এর অসাধারণ যুগলবন্দি সত্যিই তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো। সাথে রাজস্থানের সাংস্কৃতিক প্রতিপত্তি,রাজার উপস্থিতি সবকিছুই যেনো ইতিহাসকে চোখের সামনে ফুটিয়ে তুলতে যথেষ্ট। আমাদের ভারতবর্ষে ফোক গানের কদর এক আলাদা স্তরেই বিদ্যমান, এত সুন্দর ভাবে তার পরিবেশন সাথে বিভিন্ন অসাধারণ কিছু রাগের উপস্থিতি ভারতীয় ক্লাসিক্যাল সঙ্গীতের প্রেমে পড়ার জন্য যথেষ্ট।

অতুল কুলকর্ণী, নাসিরউদ্দিন সাহ, তৃধা চৌধুরী, শিবা চড্ডা দের মত নামকরা কিছু তারকাদের উপস্থিতি দেখা গেছে। সবার তাক লাগিয়ে দেওয়া অভিনয় এর পরিচয় আমরা আগেও পেয়েছি এই ওয়েব সিরিজেওবেশ সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন কিন্তু ঋত্বিক ভৌমিক (রাধে) এবং শ্রেয়া চৌধুরী (তামান্না) র অসাধারণ অভিনয় সত্যিই প্রশংসনীয়। লিড রোল রাধের পুরো ওয়েব সিরিজ টিকে এক আলাদা জায়গায় স্থান দিয়েছে সাথে তার বন্ধু কবীরের কিছু হাস্যকর মুহূর্তও এবং অটুট বন্ধুত্বের সাক্ষী এই সিরিজটি।

ডিরেকশনে র কথা বললে রাজেস্থানের যোধপুর নামক এই শহরটির সৌন্দর্য্য কে নব বধূর সাজের সাথে মিলিয়ে ফুটিয়ে তুলেছে যা এককথায় অতুলনীয়। কিন্তু কোথাও গিয়ে কিছু খামতি চোখে ধরা পড়েই। অন্তরঙ্গ মুহূর্তের প্রকাশ থাকলেও অত্যধিক পরিমাণে অকথ্য ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে যার ফলে পরিবারের সঙ্গে বসে দেখার কোনো সুযোগই নেই। সিরিজটির শেষের দিকে পপ এবং ভারতীয় ক্লাসিক্যাল সঙ্গীতের ছোয়া তো দূর নায়িকার উপস্থিতিই সরিয়ে দেওয়া হয়। লেখার ক্ষেত্রে এসব খামতি এড়িয়ে যাওয়া দায়।

শ্রীরাম গণপথী র চলচ্চিত্রশিল্প সত্যিই খুবই সুন্দর ভাবে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এডিটিং এ লিড রোল রাধে র মাস্কড ম্যান এর থিওরী এবং তার উপস্থাপনা কে দুর্বল ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সবশেষে মনমাতানো গানের যুগলবন্দী টি সত্যিই অবিস্মরণীয়। সেটা যদি নাই দেখলেন তাহলে কি দেখলেন প্রশ্ন করতে হয়। সঙ্গীত জগতের তিন অনবদ্য সৃষ্টিকর্তা কর্তা সংকর মহাদেভান, এহসান এবং লয়ের হাত ধরেই এই সিরিজের যে উত্থান। তাদের গাওয়া প্রত্যেকটি রাগের মধ্যে যে আলাদাই আবেগ, অনুভূতি,বেদনা,বিরহ,প্রেমের স্পর্ধা প্রকাশ পেয়েছে যা সত্যিই না শুনে বোঝা সাধ্যের বাইরে।

Continue Reading
Advertisement
Advertisement
Advertisement e

আমাদের ফেসবুকে পেজ লাইক করুন

Advertisement
Advertisement

জনপ্রিয় পোস্ট